বাংলার নমঃশূদ্র আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও

বাংলার নমঃশূদ্র আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও
বাংলার নমঃশূদ্র আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও

ভূমিকা

বাংলায় দলিত আন্দোলনের মধ্যে অন্যতম প্রধান ছিল নমঃশূদ্র আন্দোলন। বাংলার দলিত জাতিগুলির মধ্যে নমঃশূদ্ররা ছিল সবচেয়ে বেশি ঐক্যবদ্ধ ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী। নমঃশূদ্ররা তাদের ধর্মগুরু শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর ও শ্রী গুরুচাঁদ ঠাকুরের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করে।

নমঃশূদ্র আন্দোলনের সূচনা

নমঃশূদ্র আন্দোলনের সূচনা হয় ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে, বাংলার ফরিদপুর জেলার বাখরগঞ্জ অঞ্চলে। এক বিশিষ্ট নমঃশূদ্র নেতার মায়ের শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠানে উঁচু জাতের লোকেরা আসতে অস্বীকার করে। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে নমঃশূদ্ররা উঁচু জাতের লোকের বাড়িতে কাজ করতে অস্বীকার করে। এই ঘটনা নমঃশূদ্রদের ঐক্যবদ্ধ হতে সাহায্য করে।

নমঃশূদ্র আন্দোলনের পটভূমি

বাংলার নমঃশূদ্ররা বিভিন্ন কারণে সংঘবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করেছিল।

[1] ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় এবং ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় নমঃশূদ্রদের সম্মেলনে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলা হয় যে, নমঃশূদ্ররা হল অধিকাংশই দরিদ্র, কৃষক ও শ্রমজীবী। এরা উঁচু বর্ণের ভূস্বামীদের দ্বারা অত্যাচারিত হচ্ছে।

[2] হরিচাঁদ ও গুরুচাঁদ ঠাকুরের ধর্মীয় নেতৃত্ব নমঃশূদ্রদের ঐক্যবদ্ধ হতে বিশেষভাবে সহায়তা করে।

আন্দোলন

হরিচাঁদ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত মতুয়া ধর্মসম্প্রদায়কে কেন্দ্র করেই নমঃশূদ্রদের সামাজিক আন্দোলন শুরু হয়। তাদের আন্দোলনের প্রধান কেন্দ্র ছিল ফরিদপুর জেলার ওড়াকান্দি গ্রাম। নমঃশূদ্ররা এই আন্দোলন ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে একটি সমিতি গঠন করে এবং নিয়মিত ‘উন্নয়নী সভা’র আয়োজন করে। তা ছাড়া যাত্রানুষ্ঠান ও প্রতি পরিবার থেকে ‘মুষ্টি’ সংগ্রহের মাধ্যমেও আন্দোলনের বিস্তার ঘটে। নমঃশূদ্ররা ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে বেঙ্গল নমঃশূদ্র অ্যাসোসিয়েশন (Bengal Namasudra Association) প্রতিষ্ঠা করে পুরোপুরি সংগঠিত হয়ে আন্দোলন পরিচালনা করে।

  • নমঃশূদ্ররা তাদের নমঃশূদ্র নামের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দাবি করেছিল। ১৯১১ খ্রিস্টাব্দের আদমশুমারিতে তাদের নমঃশূদ্র নামকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
  • নমঃশূদ্ররা তাদের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে কিছু সুযোগসুবিধার দাবি করে এবং এক্ষেত্রে তারা কিছু সুযোগসুবিধা লাভে সক্ষমও হয়।
  • রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নমঃশূদ্রদের দাবি ছিল পৃথক নির্বাচন ও স্বায়ত্তশাসনমূলক প্রতিষ্ঠানে প্রতিনিধির সংখ্যা বাড়ানো। ব্রিটিশ সরকার এক্ষেত্রেও নমঃশূদ্রদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল। তাই নমঃশূদ্ররাও ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেনি।

মূল্যায়ন

বাংলার দলিত আন্দোলনের ইতিহাসে নমঃশূদ্র আন্দোলন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সংগঠিত নমঃশূদ্র আন্দোলন ভারতের অন্যান্য দলিত আন্দোলনকে প্রভাবিত করেছিল।

Leave a Comment