বাংলার নমঃশূদ্র আন্দোলনের চরিত্র ও বৈশিষ্ট্যগুলি বিশ্লেষণ করো

বাংলার নমঃশূদ্র আন্দোলনের চরিত্র ও বৈশিষ্ট্যগুলি বিশ্লেষণ করো
বাংলার নমঃশূদ্র আন্দোলনের চরিত্র ও বৈশিষ্ট্যগুলি বিশ্লেষণ করো।

ভূমিকা

নমঃশূদ্ররা আদিতে চণ্ডাল নামে পরিচিত ছিল। পূর্ব বাংলার ঢাকা, ফরিদপুর, বাখরগঞ্জ, যশোহর, খুলনা, ময়মনসিংহ প্রভৃতি জেলার এক বৃহৎ অংশে নমঃশূদ্ররা নিজেদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতির লক্ষ্যে আন্দোলনের পথ বেছে নেয়।

নমঃশূদ্র আন্দোলনের চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য

সামাজিক মর্যাদারক্ষার লড়াই : ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে কার্যত নমঃশূদ্র আন্দোলনের সূচনা হয়। উচ্চ ব্রাহ্মণশ্রেণি দ্বারা পদে পদে অপমানিত হওয়ায় নমঃশূদ্ররা সিদ্ধান্ত নেয় যে, যতদিন তাদের সামাজিক মর্যাদাকে স্বীকৃতি না দেওয়া হচ্ছে ততদিন তারা উচ্চ জাতিগোষ্ঠীর লোকেদের কোনোরকম পরিষেবা প্রদান করবে না। এরা নিজেদের সামাজিক অবস্থান ও মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য উচ্চ জাতি ও বর্ণের লোকেদের কিছু কিছু আচার-আচরণ ও প্রথাগুলিকেও আত্মস্থ করার চেষ্টা করে।

পৃথক জাতি ও ধর্ম গ্রহণের উদ্যোগ: উচ্চবর্ণের হিন্দুদের আচরণে ক্ষুব্ধ নমঃশূদ্ররা নিজেদের পৃথক জাতি হিসেবে ঘোষণা করে ব্রিটিশ সরকারের কাছে অনুগ্রহ লাভের চেষ্টা করে। বিশের দশকে বাংলার নমঃশূদ্ররা খ্রিস্টধর্ম গ্রহণে উদ্যোগী হয় এবং এ ব্যাপারে খ্রিস্টান মিশনারিরাও এগিয়ে আসে।

মতুয়া মহাসংঘের প্রভাব:
ঊনবিংশ শতকের শেষদিকে শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের আদর্শে প্রতিষ্ঠিত হয় মতুয়া মহাসংঘ। এই মতুয়া মহাসংঘ তার সহজসরল ভক্তিবাদী মত প্রচার করে বাংলার নমঃশূদ্র সমাজের এক বিরাট অংশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে এবং তাদের ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনকে পরিপুষ্ট করে।

বিংশ শতকে আন্দোলনের চরিত্র/বৈশিষ্ট্যগত পরিবর্তন

বিংশ শতকের শুরুতে বাংলার নমঃশূদ্রদের আন্দোলনে চরিত্র ও বৈশিষ্ট্যগত পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। এই সময় থেকে তারা সামাজিক ন্যায়বিচারের নামে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার পৃষ্ঠপোষকতা দাবি করে এবং সেইসঙ্গে তারা ঔপনিবেশিক সরকারের পক্ষ অবলম্বন করে। এই কারণেই নমঃশূদ্ররা বাংলার স্বদেশি আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যোগদান করা থেকে বিরত থাকে।

মূল্যায়ন

পরিশেষে বলা যায়, উচ্চবর্ণের হিন্দুদের আর্থিক শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ নমঃশূদ্র আন্দোলন গড়ে উঠলেও পরবর্তীকালে এই আন্দোলনে দুটি ধারা পরিলক্ষিত হয়- একদিকে উচ্চ জাতির হিন্দুদের বিরোধিতা এবং অন্যটি ঔপনিবেশিক সরকারের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য প্রদর্শন।

Leave a Comment