বন্যা কী? বন্যা সৃষ্টির কারণগুলি আলোচনা করো

বন্যা কী? বন্যা সৃষ্টির কারণগুলি আলোচনা করো
বন্যা কী? বন্যা সৃষ্টির কারণগুলি আলোচনা করো।

বন্যা: 

ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তরের সংজ্ঞানুযায়ী, কোনো স্থানে স্বাভাবিক গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের তুলনায় 125%-এর বেশি বৃষ্টিপাত হলে, তাকে বন্যা বলা হয়। বন্যার অর্থ জল জমা নয়। অতি বর্ষণ বা অন্য কারণে নদীর জলস্তর বিপদসীমা ছাড়িয়ে বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে জলমগ্ন করলে তাকে বন্যা বলে। বন্যার সুদূরপ্রসারী ফলই হল বিপর্যয়ের কারণ।

বন্যা সৃষ্টির কারণ: 

বন্যা সৃষ্টির পিছনে একাধিক প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট কারণ রয়েছে। যথা

বন্যা সৃষ্টির প্রাকৃতিক কারণ :

• দীর্ঘস্থায়ী প্রবল বৃষ্টি: অধিক সময় ধরে প্রবল বৃষ্টি হলে নদী, খাল-বিলগুলির ধারণ ক্ষমতার তুলনায় জল অনেক বেড়ে যায়, ফলে বন্যার সৃষ্টি হয়। উদাহরণ- ① অধিক বৃষ্টিপাতের কারণে 1978 সালে দামোদর নদের বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। ② 2013 সালের Cloud burst বা মেঘভাঙা বৃষ্টির ফলে উত্তরাখণ্ডের কেদারনাথের বন্যা হয়েছিল।
• হিমবাহের গলন: গ্রীষ্মকালে অধিক উন্নতার কারণে হিমবাহ গলনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ফলে, হিমবাহ থেকে সৃষ্ট নদীগুলিতে জলের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় ও বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
• অগভীর নদী উপত্যকা: দীর্ঘ দিন পলি জমে জমে নদী উপত্যকা অগভীর হয়ে পড়লে বর্ষায় নদীর জল স্বাভাবিকভাবেই দুকুল ছাপিয়ে বন্যার সৃষ্টি করে। যেমন- গঙ্গা নদীতে এ কারণে প্রায়শই বন্যা হয়। 
• ঘূর্ণিঝড়: প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে সমুদ্রে জলোচ্ছ্বাস হলে উপকূল অঞ্চল প্লাবিত হয়। যেমন -2009 সালে ‘আয়লা’ ঝড়ের প্রভাবে সুন্দরবন অঞ্চলে বন্যা সৃষ্টি হয়। 2015 সালের শক্তিশালী ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের কারণে তামিলনাড়ুর বন্যা উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
• সুনামি : সুনামির জলোচ্ছ্বাসে উপকূলবর্তী অঞ্চলে বন্যা দেখা দেয়। যেমন – 2004 সালে তামিলনাড়ু উপকূলের সুনামি-র ফলে সৃষ্ট বন্যা।
• জোয়ার: সাধারণত বর্ষার সময় নদীতে ভরা জোয়ার এলে অনেক সময় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

বন্যা সৃষ্টির মনুষ্যসৃষ্ট কারণ :

• বৃক্ষচ্ছেদন: নির্বিচারে গাছকাটার ফলে মৃত্তিকা ক্ষয় বৃদ্ধি পায়। এই মৃত্তিকা নদীগর্ভে সঞ্চিত হয়ে নদীর জলধারণ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ফলে, নদীতে জলের পরিমাণ বাড়লে বন্যা সৃষ্টি হয়।
• বাঁধের জল ছাড়া: বর্ষাকালে নদীতে বাঁধের পিছনে জলের পরিমাণ বিপদসীমা অতিক্রম করলে বাঁধের জল ছাড়তে হয়। এর ফলে বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়। উদাহরণ – DVC, কংসাবতী, ময়ূরাক্ষী জলাধারের জল মাত্রাতিরিক্ত ছাড়ার ফলে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে প্রায় বন্যা দেখা যায়।
• নদী প্রণালীর পরিবর্তন : জলবিদ্যুৎ উৎপাদন এবং জলসেচের কারণে নদীপথে বাঁধ এবং জলাধার নির্মাণের ফলে নদীপ্রণালীর যে পরিবর্তন ঘটে তাতে নিম্ন অববাহিকায় বন্যার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
• নগরায়ণ : অতীতকাল থেকে নদীকে কেন্দ্র করেই নগর সভ্যতার বিকাশ ঘটেছে। আধুনিক সভ্যতায় নগরায়ণ ও শিল্পায়ন অধিক ঘটায় নদী অববাহিকার মাটিতে জলের অনুপ্রবেশ হ্রাস পেয়ে পৃষ্ঠপ্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে বন্যার প্রবণতা অনেক বেড়েছে।

Leave a Comment