ফ্রান্সে ডাইরেক্টরি শাসনের পতনের কারণগুলি আলোচনা করো

ফ্রান্সে ডাইরেক্টরি শাসনের পতনের কারণগুলি আলোচনা করো
ফ্রান্সে ডাইরেক্টরি শাসনের পতনের কারণগুলি আলোচনা করো।

ভূমিকা

১৭৯৫ খ্রিস্টাব্দে জাতীয়-সম্মেলন কর্তৃক রচিত নতুন শাসনতন্ত্র (Constitution of the Year III) অনুযায়ী ফ্রান্সের শাসনকার্য পরিচালনার দায়িত্ব ‘ডাইরেক্টরি’ (Directory) নামে অভিহিত পাঁচজন সদস্য নিয়ে গঠিত একটি পরিষদের ওপর অর্পিত হয়। এই শাসনতন্ত্র অনুযায়ী ফ্রান্সে “The Five Hun- dred’ ও ‘The Council of Ancients’ নামে অভিহিত দুইটি কক্ষযুক্ত একটি আইন-পরিষদ প্রতিষ্ঠিত হয়। ডাইরেক্টরি শাসনের দু’ধরনের কৃতিত্ব ছিল, যথা : ১ ফ্রান্সের অভ্যন্তরীণ পুনর্গঠন এবং ২ ফরাসি প্রজাতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখতে বৈদেশিক ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র নীতি গ্রহণ।

ডাইরেক্টরি শাসনের পতনের কারণ

ডাইরেক্টরি শাসনের পতনের মূল কারণ ছিল সদস্যগণের মধ্যে মতানৈক্য ও ভ্রান্ত শাসনের পররাষ্ট্র নীতি।

ডাইরেক্টরির সদস্যগণের মতবৈষম্য

ডাইরেক্টরির সদস্যরা নিজেদের মধ্যে মতবৈষম্যঘটিত কলহে লিপ্ত ছিলেন। এর ফলে তাঁরা সম্মিলিতভাবে কোনো কর্মপন্থা গ্রহণ করবে পারেনি।

ফ্রান্সের স্বার্থকে অবজ্ঞা

ডাইরেক্টরির শাসনকালে ফ্রান্সে একশ্রেণির নতুন বিত্তশালী সম্প্রদায় ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত হয়। এই শ্রেণির লোকেরা ফ্রান্সের সর্বাঙ্গীণ উন্নতির চেয়ে নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণের প্রতি বেশি আগ্রহী ছিলেন। স্বভাবতই, ডাইরেক্টরির শাসন দুর্নীতিপূর্ণ হয়ে পড়ে।

স্বৈরাচারী নীতি

রাজতন্ত্রের সমর্থক দল এবং উগ্রপন্থী বিপ্লবীগণ সর্বদাই ডাইরেক্টরির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। আইন-পরিষদের পাঁচশত প্রতিনিধি-সভার (The five hundred) সভাপতি পিসেগুর (Pichegru) সামরিক শক্তির সাহায্যে দমন করে।

ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ইউরোপীয় রাষ্ট্রজোট গঠন

ডাইরেক্টরির আক্রমণাত্মক ও ভ্রান্ত পররাষ্ট্র নীতিও এর পতনের জন্য কম দায়ী ছিল না। ডাইরেক্টরি সুইজারল্যান্ড ও ইটালি দখল করে ওই দুই রাজ্যকে যথাক্রমে হেলভেটিক রিপাবলিক (Helvetic Republic) ও টাইবেরিয়ান রিপাবলিক (Tiberian Republic) নামে দুটি সাধারণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে। এর ফলে ইউরোপের রাজতন্ত্রশাসিত রাষ্ট্রগুলি ফ্রান্সের বিরুদ্ধে আবার একটি রাষ্ট্রজোট (The Second Coalition) গঠন করে। ইটালি, সুইজারল্যান্ড ও হল্যান্ডের বিভিন্ন রণক্ষেত্রে রাষ্ট্রজোটের সম্মিলিত আক্রমণে ফরাসিবাহিনী বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।

জনসাধারণের ক্ষোভ

দেশের ভেতরে অপশাসন আর দেশের বাইরে পরাজয়-এর ফলে ফ্রান্সের জনসাধারণ ডাইরেক্টরির ওপর বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ে।

নেপোলিয়ন কর্তৃক ডাইরেক্টরির উচ্ছেদসাধন

নেপোলিয়নের মিশরে অবস্থানকালে ফ্রান্সের সেই সংকটপূর্ণ অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির খবর পেয়ে অবিলম্বে তিনি ফ্রান্সে ফিরে আসেন এবং ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে সামরিক শক্তির সাহায্যে ডাইরেক্টরি শাসন উচ্ছেদ করে ‘কনসুলেট শাসন’ প্রবর্তন করেন। নেপোলিয়ন যখন ডাইরেক্টরির শাসন উচ্ছেদ করে ক্ষমতা দখল করেন, তখন ফ্রান্সের জনসাধারণ তাঁকে ফরাসি জাতির ত্রাণকর্তা হিসেবে সানন্দে বরণ করেছিল।

Leave a Comment