‘ফুরয় না তার কিছুই ফুরয় না,/নটেগাছটা বুড়িয়ে ওঠে, কিন্তু মুড়য় না!”-কী ফুরোনোর কথা বলা হয়েছে? ‘নটে গাছটা বুড়িয়ে ওঠে, কিন্তু মুড়য় না’- কথাটির তাৎপর্য কী? |
গ্রামবাংলার প্রতি আকর্ষণ
তাৎপর্য
আলোচ্য পঙ্ক্তিটি ‘আবহমান’ কবিতায় কবি বারবার ব্যবহার করেছেন। এই ব্যবহারের মধ্য দিয়ে সংবেদনশীল কবিমন ধরে ফেলেছে আপামর বাঙালি হৃদয়ের এক না-ফুরোনো অনুভূতিকে। বিদেশ-বিভুঁই মানুষকে বিলাসিতা দিলেও বাংলার গ্রামজীবনের শান্তির বাতাবরণ দিতে পারে না কখনোই। কবি খেয়াল করেছেন বহুযুগ ধরে মানুষ তাই এই বাংলার গ্রামীণ জীবনকে ভালোবেসে ফেলেছে ‘নিবিড় অনুরাগে’। এই বাংলার মাটিকে, হাওয়াকে ভালোবেসে ঘরছাড়া বঙ্গজন তাই বারবার ফিরে এসেছে ‘ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড়’ গ্রামবাংলায়। কবি উপলব্ধি করেছেন- গ্রামজীবনের সঙ্গে তথা প্রকৃতির সঙ্গে লগ্ন হয়ে মানুষের বেঁচে থাকার স্বাদ এবং সাধ ফুরোয় না। যুগ যুগ ধরে বঙ্গবাসী-
সূর্যের যাওয়া-আসা, নদীর বয়ে চলার মতোই বঙ্গজনের সুখ-দুঃখ, আশা-আনন্দ, বেদনা-উন্মাদনা পুরানো হয় না কখনও। আবহমান কাল ধরে তাই বঙ্গদেশে ফিরে আসার ইচ্ছে বাঙালির অটুট থাকে। কবির অনুভূতিতে ধরা পড়ে এক আশ্চর্য সত্য; -জন্মভূমিতে ফিরে আসার, গ্রামজীবনে ফিরে আসার গল্প মানুষের ফুরাবার নয়। রূপকথার গল্পে গল্পকথা ফুরোলে তবে নটেগাছটি মুড়িয়ে যায়। আলোচ্য কবিতায় আবহমান কাল ধরে মানুষের ঘরে ফেরার যে গল্প কবি শোনান তা ফুরোয় না বলেই নটেগাছটি না মুড়িয়ে বুড়িয়ে ওঠে।