ফরাসি বিপ্লবে নারীদের ভূমিকা আলোচনা করো

নারী সমাজ ফরাসি বিপ্লবের পশ্চাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল। তবে ফরাসি বিপ্লবে নারীরা কতখানি ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং নারীদের ওপর এর দীর্ঘকালীন প্রভাব কী ছিল তা নিয়ে বিংশ শতাব্দীর শেষদিক পর্যন্ত ঐতিহাসিকদের মধ্যে নানা মতবিরোধ রয়েছে।

বিপ্লব পূর্ববর্তী ফ্রান্সে নারীদের কোনো রাজনৈতিক অধিকার ছিল না। তারা ‘নিষ্ক্রিয়’ নাগরিকরূপে পরিচিত ছিল। বৃহত্তর সামাজিক ও রাজনৈতিক সংস্কারের পরিপ্রেক্ষিতে প্যারিসসহ অন্যত্র নারীবাদী চেতনার বিকাশ ঘটেছিল। নারীরা পুরুষদের সঙ্গে সমান অধিকার দাবি করেছিল এবং পুরুষ আধিপত্যের অবসান কামনা করেছিল। বিভিন্ন প্রচার, পুস্তিকা এবং নারীসংঘের মধ্যে দিয়ে এধরনের চিন্তাভাবনার বিকাশ ঘটেছিল। যেমন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সোসাইটি অফ রেভল্যুশনারি রিপাবলিক উইমেন (Society of Revolutionary Republic Women) |

ফরাসি বিপ্লব শুরু হলে সেদেশের একাধিক নারী সক্রিয়ভাবে আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ে। তারা তাদের রাজনৈতিক মতামত প্রকাশ্যে জানায়। জিরন্ডিন ও জ্যাকোবিন উভয় দলের মধ্যেই একাধিক নারী এ ব্যাপারে সক্রিয় অবদান রাখেন। ডি-আর্জন্ট ছিলেন একজন উল্লেখযোগ্য জিরন্ডিস্ট নেত্রী। অন্যদিকে জ্যাকোবিন দলের নেত্রী ছিলেন মাদাম রোল্যাঁ, পাওলিন লিওন প্রমুখ। পুরুষের সমান অধিকারের দাবি জানিয়ে আন্দোলন করেছিলেন আলিম্প দ্য গুজ।

প্রায় 6 হাজার নারী মিছিলে সমবেত হয়ে খাদ্যের দাবিতে ভার্সাই রাজপ্রাসাদ আক্রমণ করেন। তাঁদের হাতে প্রায় নজরবন্দি হয়ে রাজপরিবার ভার্সাই থেকে প্যারিসে চলে আসতে বাধ্য হয়।

দার্শনিক ডেনিস দিদেরো নারী-পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি তোলেন। এ ছাড়া আলিম্প দ্য গুজ নারী-পুরুষের সমান অধিকারের দাবিতে আন্দোলন করেন।

1789 খ্রিস্টাব্দের 14 জুলাই বাস্তিল দুর্গ পতনের ক্ষেত্রে নারীদের বিশেষ ভূমিকা ছিল। নারীরাই বাস্তিল দুর্গের ধ্বংসসাধনে পুরুষদের উৎসাহিত করেন।

এস্টেট জেনারেলে অভিজাত সম্প্রদায়ের নারীদের ভূমিকা থাকলেও তৃতীয় শ্রেণির নারীদের কোনো ভূমিকা ছিল না। এস্টেট জেনারেলে নারীদের প্রতিনিধিত্ব করার দাবি তোলেন মাদাম বিবি।

এইভাবে দেখা যায় যে, ফরাসি মহিলারা নির্ভয়ে দাঙ্গাহাঙ্গামা ও সক্রিয় আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। সরকারি বাহিনী তাদের দমাতে পারেনি। ফরাসি বিপ্লবের মধ্য দিয়ে নারীরা বেশ কয়েকটি অধিকার অর্জন করেন। তাঁরা স্বাধীনভাবে বিবাহ করার অধিকার লাভ করেন। বিবাহবিচ্ছেদের অধিকার লাভ করেন। অবৈধ সন্তানের স্বীকৃতি পান। সম্পত্তির অধিকার পান। রাজনৈতিক অধিকার পান। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এইসব অধিকার ভোগ করতেন অভিজাত সম্প্রদায়ের মহিলারা।

আরও পড়ুন – নীতি-কর্তব্যবাদীরূপে কান্টের অভিমত ব্যাখ্যা করো