পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ অক্ষরেখাগুলির পরিচয় দাও ও তাদের ব্যবহার লেখো

পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ অক্ষরেখাগুলির পরিচয় দাও ও তাদের ব্যবহার লেখো
পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ অক্ষরেখাগুলির পরিচয় দাও ও তাদের ব্যবহার লেখো

সমাক্ষরেখা / অক্ষরেখা (Parallel of Latitude) : 

পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের সমান অক্ষাংশবিশিষ্ট স্থানগুলিতে পূর্ব-পশ্চিমে বৃত্তাকার যে-সমস্ত রেখা কল্পনা করা হয়েছে, তাদের অক্ষরেখা বলে।
পৃথিবীতে যতগুলি অক্ষরেখা কল্পনা করা হয়েছে, তাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি অক্ষরেখাকে পৃথকভাবে নামকরণ করা হয়েছে। এই অক্ষরেখাগুলি হল—

• নিরক্ষরেখা (Equator) : 

পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ মেরুবিন্দু থেকে সমান দূরত্বে পৃথিবীর ঠিক মাঝখান দিয়ে পূর্ব-পশ্চিমে কল্পিত বৃত্তাকার রেখাকে নিরক্ষরেখা বলে। এর অক্ষাংশ ০°।
গুরুত্ব / ব্যবহার : 
(i) পৃথিবীকে সমান দুটি গোলার্ধে ভাগ করেছে। যথা – উত্তর গোলার্ধ ও দক্ষিণ গোলার্ধ। 
(ii) কোনো স্থান উত্তর গোলার্ধে কতটা উত্তরে বা দক্ষিণ গোলার্ধে কতটা দক্ষিণে অবস্থিত তা নিরক্ষরেখার সাহায্যে ওই স্থানের অক্ষাংশ নির্ণয়ের মাধ্যমে জানা যায়। 
(iii) নিরক্ষরেখায় সারা বছর সূর্য প্রায় লম্বভাবে কিরণ দেয় বলে, এখানে যেমন দিন-রাত্রি সমান হয়, তেমনি উয়তা বেশি হওয়ায় উল্লমণ্ডল সৃষ্টি হয়েছে।

• কর্কটক্রান্তিরেখা (Tropic of Cancer): 

নিরক্ষরেখার উত্তরে 23/½° কৌণিক দূরত্বে অবস্থিত যে কাল্পনিক বৃত্তাকার রেখা পৃথিবীকে পূর্ব-পশ্চিমে বেষ্টন করে রয়েছে, তাকে কর্কটক্রান্তি রেখা বলে। এর মান 23/½° উত্তর।
গুরুত্ব / ব্যবহার: 
(i) 21 জুন এই রেখায় সূর্যের উত্তরায়ণ শেষ হয়, অর্থাৎ সূর্যের উত্তরায়ণের শেষ সীমা হিসেবে কর্কটক্রান্তি রেখার গুরুত্ব অপরিসীম। 
(ii) উত্তর গোলার্ধে উল্লমণ্ডল ও নাতিশীতোষ্ণমণ্ডলের মধ্যে সীমা রূপেও কর্কটক্রান্তি রেখা গুরুত্বপূর্ণ।

• মকরক্রান্তিরেখা (Tropic of Capricorn): 

নিরক্ষরেখার দক্ষিণে 23/½° কৌণিক দূরত্বে অবস্থিত যে কাল্পনিক বৃত্তাকার রেখা পৃথিবীকে পূর্ব-পশ্চিমে বেষ্টন করে রয়েছে, তাকে মকরক্রান্তি রেখা বলে। এর মান 23½° দক্ষিণ।
গুরুত্ব/ব্যবহার: 
(i) 22 ডিসেম্বর এই রেখায় সূর্যের দক্ষিণায়ন শেষ হয়। অর্থাৎ, সূর্যের দক্ষিণায়নের শেষ সীমারূপে মকরক্রান্তিরেখার গুরুত্ব অপরিসীম। 
(ii) দক্ষিণ গোলার্ধে উয়মণ্ডল ও নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলের মাঝের সীমারূপেও এই রেখা গুরুত্বপূর্ণ।

• সুমেরু বৃত্ত (Arctic Circle): 

নিরক্ষরেখার উত্তরে 661/2° কৌণিক দূরত্বে অবস্থিত যে কাল্পনিক বৃত্তাকার রেখা পৃথিবীকে পূর্ব-পশ্চিমে বেষ্টন করে রয়েছে, তাকে সুমেরু বৃত্ত বলে। এর অক্ষাংশ 661/2° উত্তর। 
গুরুত্ব / ব্যবহার: 
(i) উত্তর গোলার্ধে এই বৃত্তে নাতিশীতোষ্ণমণ্ডল শেষ হয় এবং হিমমণ্ডল শুরু হয়। 
(ii) প্রতিবছর 21 জুন থেকে 22 ডিসেম্বর সুমেরু বৃত্ত থেকে সুমেরু বিন্দু পর্যন্ত অঞ্চল সর্বদা আলোকিত থাকে এবং 23 ডিসেম্বর থেকে 20 জুন এই অঞ্চল সর্বদা অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে।

• কুমেরু বৃত্ত (Antarctic Circle): 

নিরক্ষরেখার দক্ষিণে 66/2° কৌণিক দূরত্বে অবস্থিত যে কাল্পনিক বৃত্তাকার রেখা পৃথিবীকে পূর্ব-পশ্চিমে বেষ্টন করে রয়েছে, তাকে কুমেরু বৃত্ত বলে। এর অক্ষাংশ 66½° দক্ষিণ।
গুরুত্ব / ব্যবহার: 
(i) দক্ষিণ গোলার্ধে এই বৃত্তে নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডল শেষ হয় এবং হিমমণ্ডল শুরু হয়। 
(ii) প্রতিবছর 23 ডিসেম্বর থেকে 20 জুন কুমেরু বৃত্ত থেকে কুমেরু বিন্দু পর্যন্ত অঞ্চল সর্বদা আলোকিত থাকে এবং 21 জুন থেকে 22 ডিসেম্বর এই অঞ্চল সর্বদা অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে।

সুমেরু বিন্দু (Arctic Region): 

নিরক্ষরেখা থেকে উত্তরে 90° কৌণিক দূরত্বে অবস্থিত মেরুবিন্দুকে সুমেরু বিন্দু বলে। অন্যান্য অক্ষরেখার ন্যায় এটি রেখা নয়, এটি পৃথিবীর অক্ষের উত্তর বিন্দু স্বরূপ।
গুরুত্ব / ব্যবহার: 
(i) এখানে বছরে 6 মাস দিন ও 6 মাস রাত বিরাজ করে। 
(ii) সুমেরু বিন্দুর মাথার উপর 90° কোণে অবস্থিত ধ্রুবতারার সাহায্যে যেমন উত্তর দিক নির্ণয় করা যায়, তেমনি উত্তর গোলার্ধের কোনো স্থানের অক্ষাংশও নির্ণয় করা যায়।
(iii) পৃথিবীর উত্তরের শেষপ্রান্ত, জীবমণ্ডলের শেষ সীমারূপেও গুরুত্বপূর্ণ।

• কুমেরু বিন্দু (Antarctic Region):

নিরক্ষরেখা থেকে দক্ষিণে 90° কৌণিক দূরত্বে অবস্থিত মেরুবিন্দুকে কুমেরু বিন্দু বলে। এটিও অক্ষরেখা নয়, পৃথিবীর অক্ষের দক্ষিণ বিন্দু স্বরূপ।
গুরুত্ব / ব্যবহার: 
(i) এখানে বছরে 6 মাস দিন ও 6 মাস রাত থাকে। 
(ii) কুমেরু বিন্দুর মাথার উপর 90° কোণে অবস্থিত হ্যাডলির অকট্যান্ট নামক নক্ষত্রের সাহায্যে দক্ষিণ দিক নির্ণয় করা যায় এবং দক্ষিণ গোলার্ধের কোনো স্থানের অক্ষাংশ নির্ণয় করা যায়। 
(iii) পৃথিবীর দক্ষিণের শেষপ্রান্ত, হিমমণ্ডলের শেষ সীমারূপে গুরুত্বপূর্ণ।

Leave a Comment