পাতসংস্থান তত্ত্বের (Plate Tectonic Theory) ভিত্তিতে ভঙ্গিল পর্বতের উৎপত্তি আলোচনা করো |
পাতসংস্থান ভঙের ভিত্তিতে ভঙ্গিল পর্বতের গঠন :
পাতসংস্থান তত্ত্ব আবিষ্কার :
ভূবিজ্ঞানী জে টি উইলসন (J T Wilson) 1965 খ্রিস্টাব্দে প্রথম ‘পাত’ (Plate) শব্দটি ব্যবহার করেন। এরপর ম্যাকেঞ্জি, পার্কার, মর্গান প্রমুখ বিজ্ঞানীগণ এই তত্ত্বের অবতারণা করলেও ফরাসি বিজ্ঞানী লা পিঁচো (Le Pichon) প্রথম পাত তত্ত্বের সর্বাধুনিক ব্যাখ্যা দেন।
তত্ত্বের মূল বক্তব্য
- পৃথিবীর ভূত্বক অনেকগুলি খণ্ডের সমষ্টি। প্রতি খণ্ডকে পাত বলে। ভূত্বকে এই ধরনের টি বড়ো পাত, ৪টি মাঝারি ও 20টিরও বেশি ছোটো পাত আছে।
- অ্যাস্থেনোস্ফিয়ারের উপর ভাসমান পাতগুলি তাপের পরিচলন স্রোতের কারণে সঞ্চারিত হয়।
- এই পাত সঞ্চারণ পরস্পরের দিকে অর্থাৎ, অভিসারী অর্থাৎ, প্রতিসারী এবং পরস্পরের বিপরীত দিকে পাশাপাশি অর্থাৎ, নিরপেক্ষ – এই তিনভাবে হয়ে থাকে এবং বিভিন্ন ভূমিরূপ গঠন করে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ভঙ্গিল পর্বত।
পাত সঞ্চারণ ও ভঙ্গিল পর্বতের উত্থান :
অভিসারী পাত সীমান্তে ভঙ্গিল পর্বতের উত্থান :
অভিসারী পাত সীমান্তে চলমান দুটি পাত পরস্পরের অভিমুখে এসে ধাক্কা খায় এবং সংঘর্ষ সীমান্তে ভঙ্গিল পর্বতসহ নানা ধরনের ভূমিরূপ গঠিত হয়।
মহাদেশীয়-মহাদেশীয় পাত সীমান্তে ভঙ্গিল পর্বতের উৎপত্তি : সাধারণত দুটি মহাদেশীয় পাতের মাঝখানে থাকে একটি অপ্রশস্ত, অগভীর সমুদ্র। একে মহীখাত বা Geosyncline বলে। নদনদীর মাধ্যমে আসা পলি সঞ্চিত হয়ে এই মহীখাত ভরাট হয়। এদিকে মহাদেশীয় পাত দুটি যত পরস্পরের দিকে এগিয়ে আসে, ততই মহীখাত সংকীর্ণ হয় ও পলিরাশি ভাঁজপ্রাপ্ত হয়ে ওপরে উঠে ভঙ্গিল পর্বত (Fold Mountain) গঠন করে।
উদাহরণ: ইউরেশীয় পাত ও ইন্দো-অস্ট্রেলিয় পাতের পরস্পরের কাছে আসার ফলে টেথিস মহীখাতে সঞ্চিত পলিরাশি ভাঁজ পড়ে হিমালয় পর্বত উত্থিত হয়। ইউরেশীয় ও আফ্রিকান পাতের সংঘর্ষে পলিরাশি ভাঁজপ্রাপ্ত হয়ে আল্পস্ পর্বতের উত্থান হয়েছে।
মহাদেশীয়-মহাসাগরীয় পাত সীমান্তে ভঙ্গিল পর্বতের উত্থান: যখন একটি মহাদেশীয় পাত ও মহাসাগরীয় পাত পরস্পরের দিকে এগিয়ে আসে তখন অপেক্ষাকৃত ভারী শিলাগঠিত মহাসাগরীয় পাতটি হালকা মহাদেশীয় পাতের নীচে প্রবেশ করে, ফলে মহাদেশীয় পাতের প্রান্তে সঞ্চিত পলিরাশি ভাঁজ খেয়ে উপরের দিকে উঠে ভঙ্গিল পর্বত গঠন করে।
উদাহরণ : উত্তর আমেরিকা পাত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় পাতের মাঝে রকি পর্বতের উত্থান ঘটেছে। দক্ষিণ আমেরিকা (মহাদেশীয়) ও নাজকা (মহাসাগরীয়) পাতের মাঝে আন্দিজ পর্বত-এর উত্থান, অস্ট্রেলিয়া পাত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় পাতের মাঝে গ্রেট ডিভাইডিং রেঞ্জ-এর উত্থান ঘটেছে।