নৌবিদ্রোহের কারণ ও গুরুত্ব লেখো। |
ভূমিকা
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে সর্বশেষ উল্লেখযোগ্য আন্দোলন হল ভারতীয় নৌবাহিনীর বিদ্রোহ।
নৌবিদ্রোহের কারণসমূহ
ভারতীয় নৌসেনাদের এই বিদ্রোহের পিছনে বেশ কতকগুলি কারণ বিদ্যমান ছিল–
[1] বর্ণবৈষম্য: ভারতীয় নৌবাহিনীতে প্রবল বর্ণবৈষম্য ছিল। একই কাজে বা পদে নিযুক্ত ইংরেজ নাবিকরা ভারতীয়দের চেয়ে অনেক বেশি বেতন ও অন্যান্য সুযোগসুবিধা পেত। ফলে ভারতীয় নৌসেনারা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।
[2] নিম্নমানের খাদ্য সরবরাহ : সরকারের বিরুদ্ধে ভারতীয় নৌসেনাদের অসন্তোষের অন্যতম কারণ ছিল তাদের নিম্নমানের খাদ্য সরবরাহ করা হত। তীব্র প্রতিবাদেও কোনো সুরাহা না হওয়ায় তাদের মনে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হয়েছিল।
[3] আজাদ হিন্দ সেনাদের বিচার: পরাজিত আজাদ হিন্দ বাহিনীর সৈন্যদের লালকেল্লায় বিচার শুরু হলে দেশের জনগণের সঙ্গে ভারতীয় নৌসেনারাও ক্ষোভে ফেটে পড়ে।
গুরুত্ব
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে নৌবিদ্রোহের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম।
[1 ] হিন্দু-মুসলিম ঐক্যসাধন: নৌবিদ্রোহ ভারতে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছিল। হিন্দু-মুসলিম নাবিক, সাধারণ মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িক ঐক্যের ধারণাকে মজবুত করেছিল এই বিদ্রোহ।
[2] ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘোষণা: নৌবিদ্রোহের ফলে যে ভারতের ব্রিটিশ শাসনের অবসান ত্বরান্বিত হয়েছিল সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এই বিদ্রোহ ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘোষণা করে।
[3] মন্ত্রীমিশনের আগমন : নৌবিদ্রোহের ফলে আতঙ্কিত ইংরেজ সরকার শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য কংগ্রেস ও মুসলিম লিগের সঙ্গে আলোচনা করতে মন্ত্রীমিশনকে ভারতে পাঠায়। ১৮ ফেব্রুয়ারি নৌবিদ্রোহ শুরু হয় এবং পরের দিন ভারতে মন্ত্রীমিশন পাঠানোর কথা সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়।