‘নোঙরের কাছি বাঁধা তবু এ নৌকা চিরকাল।’-কবির এইরূপ উপলব্ধির কারণ আলোচনা করো। |
উপলব্ধির কারণ
‘নোঙর’ কবিতার রচয়িতা কবি অজিত দত্ত পরিচিত জগতের গণ্ডিতে আবদ্ধ থাকতে চান না। তরি নিয়ে কবি সাতসমুদ্র পারে পাড়ি দিতে চান। পরিচিত জগতের বাইরে অনেক দূরের দেশ তাঁকে ডাকে। তিনি নতুন দেশে পাড়ি দিতে চান। অথচ তটের কাছে নোঙরে বাঁধা পড়ে আছে তাঁর নৌকা। সমুদ্রের ঢেউগুলি তাঁর কাছে গতির বার্তা নিয়ে আসে। তিনি সারারাত জেগে দাঁড় টেনে চলেন। মাস্তুলে পাল বাঁধেন আর তারা দেখে দিক স্থির করেন। নৌকা তবু এগোয় না। কবির বিরামহীন দাঁড় টানা বৃথা হয়ে যায়–
“যতই তারার দিকে চেয়ে করি দিকের নিশানা
ততই বিরামহীন এই দাঁড় টানা।”
সাংসারিক, সামাজিক মানুষ হিসেবে কবি বাঁধা পড়ে আছেন দায়িত্ব-কর্তব্যের বাঁধনে। অথচ তাঁর সৃষ্টিশীল, কল্পনাপ্রবণ মন চাইছে সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে অসীমের ডাকে সাড়া দিতে; সভ্যতার ঘাটে ঘাটে বিলিয়ে দিতে নিজের সৃষ্টিসম্ভার। মন যা চায় মানুষ তা পায় না। জীবনব্যাপী অন্বেষণ চলে কাম্য বস্তুর। অতৃপ্ত কবির নিঃসঙ্গ-নিস্তব্ধ মুহূর্তগুলি কেঁপে ওঠে সাগরগর্জনে। দাঁড়ের প্রতিটি নিক্ষেপে তিনি স্রোতের বিদ্রুপ শুনতে পান। বাস্তবজীবনের মায়াবন্ধন ছিন্ন করা সম্ভব নয় জেনেও কবি বারংবার চেষ্টা চালিয়ে যান। এত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তাঁর জীবনতরি চিরকাল কঠিন বাস্তবতার নোঙরে বন্দি বন্ধনমুক্তির ব্যর্থতায় বিষণ্ণ কবিমনে আলোচ্য উপলব্ধি জাগে।