নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি’ বা ‘দিল্লি চুক্তি’ |
ভূমিকা
১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারত ভাগের সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তান থেকে প্রায় ১ কোটি মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে আশ্রয় নিলে সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত ভারত নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়।
নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি (দিল্লি চুক্তি)
উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধানের জন্য তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকৎ আলি খান-এর মধ্যে আলোচনা শুরু হয়। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ৮ এপ্রিল জওহরলাল নেহরু ও লিয়াকৎ আলির মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়- যেটি নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি বা দিল্লি চুক্তি নামে পরিচিত। এই চুক্তিতে স্থির হয়—
[1] সংখ্যালঘুরা যে রাষ্ট্রের আনুগত্য স্বীকার করবে তারা সেই রাষ্ট্রের কাছেই নানা সমস্যার প্রতিকার চাইবে।
[2] পূর্ববাংলা, পশ্চিমবাংলা ও আসাম থেকে যদি কেউ অন্য দেশে শরণার্থী হতে চায় তবে তাকে সাহায্য করতে হবে।
[3] ভারত ও পাকিস্তান -উভয়েই উদ্বাস্তু সমস্যার কারণ ও উদ্বাস্তুদের সংখ্যা নির্ধারণের জন্য অনুসন্ধান কমিটি ও সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করবে।
[4] পূর্ববাংলা ও পশ্চিমববাংলার মন্ত্রীসভায় সংখ্যালঘু প্রতিনিধি রাখতে হবে।
প্রতিক্রিয়া
এই চুক্তি অনেককেই হতাশ করে। এই কারণে নেহরুর মন্ত্রীসভা থেকে ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও ড. ক্ষিতিশচন্দ্র নিয়োগী পদত্যাগ করেন। তাঁরা মনে করেছিলেন, এই চুক্তি যথেষ্ট কঠোর নয় এবং এর ফলে উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধান হবে না।
ফলাফল
নেহরু উদ্বাস্তু সমস্যার গুরুত্ব বুঝে স্বাধীনতার প্রথম ৫ বছর উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তাই এই পাঁচ বছরকে ‘পুনর্বাসনের যুগ’ বলা হয়। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান থেকে শরণার্থী আসার ফলে পশ্চিমবাংলার অর্থনীতি, সমাজ ও রাজনীতিতে প্রবল প্রভাব পড়ে। ভারতে তীব্র খাদ্যসংকটের সৃষ্টি হয়।