নূতন নূতন কত গড়ে ইতিহাস’-পঙ্ক্তিটির গূঢ়ার্থ বিশ্লেষণ করো

নূতন নূতন কত গড়ে ইতিহাস'-পঙ্ক্তিটির গূঢ়ার্থ বিশ্লেষণ করো
নূতন নূতন কত গড়ে ইতিহাস’-পঙ্ক্তিটির গূঢ়ার্থ বিশ্লেষণ করো

ভূমিকা 

‘চৈতালি’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘খেয়া’ কবিতা থেকে আলোচ্য কবিতাংশটি নেওয়া হয়েছে, যেখানে মানবসভ্যতার বিবর্তনের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে রোমান্টিক কবি তাঁর অন্তর্দৃষ্টিকে অস্পষ্ট অতীতের শেষতম ক্ষণ পর্যন্ত প্রসারিত করে মানবসভ্যতার শাশ্বত ধারাটির স্বরূপ খুঁজতে চেয়েছেন। সভ্যতা পর্যবেক্ষণের সেই সামগ্রিক চিত্রে উঠে এসেছে মানবসভ্যতার দীর্ঘ বিবর্তনরেখাটি। কবি দেখেছেন যুগে যুগে মানুষ বহু বিচিত্র ইতিহাস নির্মাণ করে এগিয়ে নিয়ে চলেছে ভবিষ্যতের সভ্যতাটিকে।

গূঢ়ার্থ

নির্মোহ দৃষ্টি নিয়ে খেয়াঘাটের তটে বসে একাকী কবি উদাস হয়ে দেখেছেন, এপারের গ্রামখানি থেকে মানুষ খেয়া নৌকায় পার হয়েছে সম্মুখের নদীবক্ষ। আবার কেউ ওপারের গ্রাম থেকে এসেছে এপারে-খেয়া পারাপারের এই দৃশ্য অবলোকন করতে করতে কবির মন হয়েছে অতীতচারী। তাঁর অন্তর্দৃষ্টিতে ভেসে উঠেছে অখণ্ড মানব ইতিহাসের বিস্তৃত ক্যানভাস। সেখানে ইতিহাসের ঘনঘটাপূর্ণ অধ্যায়গুলি এসেছে একের-পর এক, আর তাদের কর্ম উদ্দীপনায় বিস্মিত হয়েছেন কবি।

কবির বক্তব্য

পরিবর্তিত পরিস্থিতির দাবিতে সহজাত সৃজনের নেশায় মানুষ যুগে যুগে কালে কালে নব নব প্রেরণায় মেতে উঠেছে, নির্মাণ করেছে সভ্যতার বহু বিচিত্র উপকরণ। কিন্তু সভ্যতার বিদেহী মূর্তিকে এই বহু বিচিত্র উপাচারে শুধু আরাধনা যেমন করেছে, আবার সেই মানুষই পাশবিক প্রবৃত্তির তাড়নায় ধ্বংসলীলায় মেতে উঠেছে। আত্মঘাতী হননযজ্ঞে রক্তস্নাত সে ইতিহাস কবিকে ব্যথিতও করেছে। যদিও লোভাতুর, স্বার্থান্ধ মানুষের সেই সর্বনাশা শক্তি মহাকালের প্রেক্ষাপটে গুরুত্ব হারিয়েছে; থেকে গেছে তাদের কলঙ্কের রেখা, ইতিহাসের পাতাকে তা কেবলই বেদনায় আর্দ্র করেছে। কিন্তু নব প্রেরণায় প্রাণিত সাধারণ মানুষ নিভৃতে নিজের প্রাণের ও মনের তাগিদে সভ্যতার যে হর্ম্য রচনা করে চলেছে, তাই মানবসভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে।-সেই নির্মাণের-সৃজনের-সম্ভাবনার ইতিহাসকেই রবীন্দ্রনাথ নতুন সৃষ্ট ইতিহাস বলে মনে করেছেন আলোচ্য সনেটটিতে।

Leave a Comment