দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অক্ষশক্তির পরাজয়ের কারণগুলি কী ছিল

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অক্ষশক্তির পরাজয়ের কারণগুলি কী ছিল
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অক্ষশক্তির পরাজয়ের কারণগুলি কী ছিল

ভূমিকা: 

জার্মানি, ইটালি ও জাপান এই তিনটি রাষ্ট্রের জোটে গড়ে উঠেছিল অক্ষশক্তি। প্রাথমিকভাবে অক্ষশক্তি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সাফল্য পেলেও এই যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত পরাজিত হয়েছিল। এই পরাজয়ের নানা কারণ ছিল।

অক্ষশক্তির পরাজয়ের কারণঃ

① হিটলারের চাপানো নীতিঃ 

অক্ষশক্তির প্রধানতম শক্তি জার্মানিতেই নাতসিবাদের বিরুদ্ধে জনমত তীব্র হয়। রাশিয়ার যুদ্ধের শেষ দিকে হিটলারকে হত্যারও ষড়যন্ত্র করা হয়। কেন-না হিটলারের এই চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধ জার্মানরা মেনে নিতে পারেনি।

② হিটলার ও মুসোলিনির জনপ্রিয়তা হ্রাস: 

হিটলার ও মুসোলিনির একনায়কতন্ত্র তাঁদের দেশবাসীরাই শেষ পর্যন্ত গ্রহণ করেনি। অহেতুক নানা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার ফলে এক সামাজিক সংকট, অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা সাধারণ মানুষকে অতিষ্ট করে তোলে। ফলে নানা প্রতিক্রিয়াও শুরু হয়। জার্মানিতে নাতসি শাসনের অবসান ঘটানোর চেষ্টা করা হয়। ইটালিতে মুসোলিনি ক্ষমতাচ্যুত হন এবং তাঁকে প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। ফলে অক্ষশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে।

③ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকার যোগদানের প্রভাব:

অক্ষশক্তি যখন ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছিল সেই সময় আমেরিকা মিত্রশক্তিতে যোগ দেয়। ফলে অক্ষশক্তির পরাজয় অনিবার্য হয়ে ওঠে।

④ মতাদর্শগত বিরোধঃ 

অক্ষশক্তিভুক্ত দেশগুলি যেমন- জার্মানি, ইটালি ও জাপানের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যোগদানের ব্যাপারে আলাদা আলাদা লক্ষ্য ছিল। এই মতাদর্শগত বিরোধ অক্ষশক্তির পতন অনিবার্য করে তুলেছিল।

⑤ অক্ষশক্তির রণকৌশলগত ত্রুটি: 

অক্ষশক্তির পতনের অন্যতম কারণ ছিল তার রণকৌশলগত ত্রুটি। জার্মানি প্রথমদিকে পশ্চিমি শক্তিগুলির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং সোভিয়েত রাশিয়ার বিরুদ্ধে অগ্রসর হয়। ফলে ইঙ্গ-মার্কিন মিলিত বাহিনী ফ্রান্সের নর্ম্যান্ডিতে অবতরণ করে। এই পরিস্থিতিতে জার্মানি দ্বিতীয় রণাঙ্গন খুলতে বাধ্য হয়। যে ঘটনা জার্মানির বিপক্ষে যায়। এই ঘটনাই শেষ পর্যন্ত অক্ষশক্তির পরাজয়ের কারণ হয়ে ওঠে।

⑥ মিত্রপক্ষের উন্নত সমরাস্ত্রঃ 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রথম পর্বে জার্মানি নানা উন্নত অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করে। যার ফলে অক্ষশক্তি ক্রমে আস্থা হারাতে থাকে।

⑦ হিটলারের ব্যর্থতা: 

নৌবাহিনীর গুরুত্বকে আমল না দিয়ে হিটলার প্যানাৎসার বা যান্ত্রিক বাহিনী, ট্যাংক, লুফৎওয়াফ বা বিমানবহর তাঁর অভিযানের কাজে লাগান। কিন্তু তা যথাযথ ছিল না।

⑧ অবস্থানগত দুর্বলতাঃ 

জার্মানির দুই দিকে ফ্রান্স ও রাশিয়ার অবস্থান ছিল। সে কারণেই জার্মানি সর্বদা আক্রমণাত্মক ভূমিকা পালন করেছিল। কিন্তু যখন ফ্রান্স ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে জার্মানিকে যুদ্ধ করতে হয় তখন তার পতন নিশ্চিত হয়।

⑨ বিশ্বজনমতের বিরোধিতাঃ 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মিত্রশক্তি জাতিপুঞ্জ গঠন করে। কিন্তু অক্ষশক্তি সারাবিশ্বে আগ্রাসী নীতির জন্য পররাজ্য লোলুপ ও গণতন্ত্রের হত্যাকারীরূপে পরিচিত হয় এবং সারা বিশ্বের জনমত অক্ষশক্তির বিরুদ্ধে যায়।

⑩ অক্ষশক্তির ঐক্যে ভাঙনঃ 

অক্ষশক্তির সমর্থনকারী দেশগুলি যেমন-রুমানিয়া, বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি, ফিনল্যান্ড প্রমুখ দেশ বিপদের সময় অক্ষশক্তি থেকে বেরিয়ে আসে। এমনকি স্পেনে জেনারেল ফ্রাঙ্কো নিজেকে গুটিয়ে নেন। ফলে অক্ষশক্তির অনিবার্য পতন ঘটে।

11 হিটলারের দায়িত্বঃ 

অক্ষশক্তির পতনের ক্ষেত্রে হিটলারের যথেষ্ট দায়িত্ব ছিল। অক্ষশক্তির সেনাপতিদের তিনি নানাভাবে অপমান করতেন। এর ওপর ছিল তাঁর নিয়ন্ত্রণহীন স্বেচ্ছাচার, যা অক্ষশক্তিকে দুর্বল করে দিয়েছিল।

উপসংহার: 

নানা কারণগুলি একত্রিত হয়ে অক্ষশক্তির পতন ঘটিয়েছিল। অক্ষশক্তির পক্ষে এককভাবে হিটলার তথা জার্মানির একান্ত নির্ভরশীলতাও শেষ পর্যন্ত জার্মানির পতনকে সুনিশ্চিত করে দেয়।

Leave a Comment