দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ গুলি আলোচনা করো

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ গুলি আলোচনা করো
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ গুলি আলোচনা করো

ভূমিকা: 

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মাত্র 21 বছরের মধ্যেই 1939 খ্রিস্টাব্দের ও সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে ওঠে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ অপেক্ষা অনেক ব্যাপক, বিধ্বংসী ও ভয়াবহ ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংগঠনের পিছনে অনেকগুলি কারণ বিদ্যমান ছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণসমূহ: 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণগুলিকে দু-ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-পরোক্ষ কারণ ও প্রত্যক্ষ কারণ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পিছনের কারণগুলি নীচে আলোচনা করা হল-

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরোক্ষ কারণ:

① ভার্সাই সন্ধির ত্রুটি: 

ভার্সাই সন্ধি জার্মানির ওপর যেভাবে জোর করে এবং অন্যায়ভাবে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাতে জার্মান জাতির মধ্যে প্রতিশোধস্পৃহা জেগে উঠেছিল। ভার্সাই সন্ধির ভুলত্রুটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য অনেকাংশেই দায়ী ছিল। তাই ই. এইচ. কার বলেছেন, ভার্সাই চুক্তির মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বীজ নিহিত ছিল (The treaty of varsaillers sowed the seeds of World 

② অতৃপ্ত জাতীয়তাবাদ: 

জার্মানির অতৃপ্ত জাতীয়তাবাদ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম কারণ ছিল। এই অতৃপ্ত জাতীয়তাবাদকে চরিতার্থ করতে নাতসি দলের ক্ষমতা দখলের মধ্য দিয়ে জার্মানিতে প্রাক্-বিশ্বযুদ্ধকালীন সামরিক তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছিল।

③ হিটলারের পররাষ্ট্রনীতি: 

হিটলারের পররাষ্ট্রনীতির মূল কথা ছিল ‘Pan-Germanism’। হিটলার এই মতবাদ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে স্থিতাবস্থা নষ্ট করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমিকা তৈরি করেছিলেন। তাই ঐতিহাসিক উডওয়ার্ডের মতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হিটলারের যুদ্ধ। তিনি এই যুদ্ধের পরিকল্পনা করেছিলেন। তিনি এই যুদ্ধ আরম্ভ করেছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত তিনিই পরাজিত হয়েছিলেন।

④ জার্মানির উগ্র জাতীয়তাবাদ :

হিটলারের আগ্রাসী নীতির সঙ্গে জার্মানির উগ্র জাতীয়তাবাদের সমন্বয়ে যে সাম্রাজ্যবাদী নীতির জন্ম হয়েছিল তা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে অনিবার্য করে তুলেছিল। চেকোশ্লোভাকিয়া, পোল্যান্ড প্রভৃতি দেশে জার্মানি সুযোগমতো যে অধিকার স্থাপনের প্রচেষ্টা করেছিল তা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে নিশ্চিত করে।

⑤ জাপানের আগ্রাসী নীতি: 

প্রাচ্য তথা এশীয় অংশে জাপান আগ্রাসী নীতি নিয়েছিল। বিশেষ করে জাপানের মাঞ্চুরিয়া আক্রমণ বিশ্ব পরিস্থিতিকে উত্তাল করে তুলেছিল।

⑥ ইটালির আগ্রাসন: 

মুসোলিনির নেতৃত্বে ইটালির পররাষ্ট্রগ্রাস নীতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে পরিণতির দিকে ঠেলে দেয়। বিশেষ করে ইটালির আবিসিনিয়া আক্রমণ পরিস্থিতিকে জটিল করে তোলে।

⑦ তোষণ নীতি: 

হিটলারের উত্থানের প্রাক্কালে ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্স যেভাবে জার্মানিকে তোষণ করে চলেছিল তা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম কারণ ছিল। এ.জে.পি টেলরের মতে, ইঙ্গ-ফরাসি তোষণ নীতি ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম কারণ।

⑧ সমাজতন্ত্র ও ধনতন্ত্রের সংঘাত : 

সমাজতান্ত্রিক রাশিয়ার উদ্ভবের সঙ্গে সঙ্গে ধনতান্ত্রিক ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মধ্যে বারবার ভুল বোঝাবুঝি, সন্দেহপ্রবণতা ও অস্তিত্বের সংকটজনিত দ্বন্দু উপস্থিত হয়। এগুলি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমিকা তৈরি করেছিল।

⑨ বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা : 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে সমগ্র বিশ্ব জুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছিল। এর ফলে বিশ্ব বাণিজ্য ও শিল্পায়ন প্রক্রিয়া দুর্বল হয়ে পড়েছিল এবং সমগ্র বিশ্বে দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি চরম আকার ধারণ করেছিল। বেশ কিছু দেশ এই সমস্যা থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেওয়ায় এই সমস্যা আরও বৃদ্ধি পায়।

⑩ জাতিসংঘের ব্যর্থতা : 

লিগ বৃহৎ শক্তিবর্গের অন্যায় কাজের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে অপারগ থাকায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঘনীভূত হয়ে উঠেছিল। ইটালির আবিসিনিয়া অধিকার কিংবা জাপানের মাঞ্চুরিয়া অধিকারের ঘটনায় লিগ দর্শকের ভূমিকা পালন করেছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণ:

হিটলারের পোল্যান্ড আক্রমণ: 

রোম-বার্লিন-টোকিও অক্ষশক্তি গঠন হাওয়ার পর হিটলার পোলিশ করিডর দাবি করেন। ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড এই ঘোষণার বিরোধিতা করে পোল্যান্ডের পক্ষ নেবে বলে হুমকি দেয়। এই হুমকিকে নস্যাৎ করে দিয়ে হিটলার 1939 খ্রিস্টাব্দের 1 সেপ্টেম্বর পোল্যান্ড আক্রমণ করে বসেন। ফলস্বরূপ ওই বছরের 3 সেপ্টেম্বর শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।

উপসংহার: 

বিশ্বের ইতিহাসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আজও একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা রূপেই বিবেচিত হয়। হিটলারের ‘শ্বেত অভিযান’-এর মধ্যে দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলেও এর জন্যে বিশ্বের সমস্ত দেশই কমবেশি দায়ী ছিল।

Leave a Comment