‘দোঁহা-পানে চেয়ে আছে দুইখানি গ্রাম।’-এরূপ উক্তির কারণ কী? |
ভূমিকা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘খেয়া’ কবিতায় প্রাপ্ত গ্রাম দুটি অবস্থান করছে নীরবে বয়ে যাওয়া নদী স্রোতের দুই তীরে। তারা আশ্রয় দিয়েছে সভ্যতার মহান সন্তানদের, যাদের মাধ্যমে বয়ে চলেছে মানবসভ্যতার চিরন্তন প্রবাহধারাটি যুগ যুগ ধরে।
বহুযুগের পরিচিত গ্রাম দুটি এক সুগভীর সম্পর্কের ডোরে আবদ্ধ–
নিশ্চল প্রশান্তি
একই সূর্যরশ্মির কিরণসম্পাতে আলোকিত গ্রাম দুটির মানুষ নদীতটের খেয়াতরিকে ব্যস্ত রাখে। গ্রাম দুটি বহির্বিশ্বের কাছে অচেনা অজানা কেন-না জগতের যাবতীয় উন্মাদনা-উন্মত্ততার তরঙ্গমালা সকল তাদের উঠোনে এসে নিশ্চল প্রশান্তিতে আশ্রয় নেয়।
উক্তির কারণ
নবীনের আবাহন আর প্রবীণের বিসর্জন স্থানু হয়ে অবলোকন করেছে গ্রাম দুখানি। তারা যেন পান্থনীড়; ক-দিনের জন্যে এখানে মানুষ আসে, আবার কাজ ফুরোলেই তাকে চলে যেতে হয়-কিছুটা বিষণ্ণ কবিমন সেই নিরন্তর যাতায়াতকে খেয়া পারাপারের রূপকে ব্যক্ত করেছেন। গ্রাম দুটি তাই অচ্ছেদ্য সম্পর্কে বাঁধা। জীবন যেমন মরণের দিকে চেয়ে থাকে, মরণও জীবনের দিকে- সেই শাশ্বত সম্বন্ধ নিয়ে তারা নদীবক্ষের দুই তীরে দাঁড়িয়ে রয়েছে যুগ-যুগান্তর ধরে-
অনন্ত জীবনপ্রবাহ ধারা
নদীবক্ষে ভাসমান খেয়াতরি গ্রাম দুইখানিকে সুগভীর সম্পর্কের ডোরে বেঁধে রেখেছে। বিপুলা এ জগৎসংসার তাদের না চিনলেও তারা নির্বিকার থেকে নিজেদের সম্বন্ধকে দৃঢ়তর করেছে। জীবন ও মরণের দ্যোতনা নিয়ে গন্তব্যের শুরু ও সমাপ্তির অনিবার্য ঠিকানা হয়ে গ্রাম দুইখানি মানবের অনন্ত জীবনের প্রবাহধারাকে চিরন্তনত্ব দান করেছে।