দলিত আন্দোলনে ড. বি আর আম্বেদকরের ভূমিকা আলোচনা করো

দলিত আন্দোলনে ড. বি আর আম্বেদকরের ভূমিকা আলোচনা করো
দলিত আন্দোলনে ড. বি আর আম্বেদকরের ভূমিকা আলোচনা করো।

ভূমিকা

বর্ণবিভক্ত ভারতীয় হিন্দুসমাজের নিম্ন সম্প্রদায়ভুক্ত প্রান্তিক জনগোষ্ঠী দলিত নামে পরিচিত। ‘দলিত’ নামকরণ করেন ড. বি আর আম্বেদকর। ‘দলন’ শব্দটি থেকে ‘দলিত’ কথাটি এসেছে। এই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সামাজিক ও রাজনৈতিক উন্নতির জন্য আম্বেদকর বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।

আম্বেদকরের পরিচিতি

‘বাবাসাহেব’ নামে পরিচিত ভীমরাও রামজি আম্বেদকর ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। নৃতত্ত্ববিদ্যা, অর্থনীতি, রাজনীতি, ইতিহাস, দর্শন ও আইনশাস্ত্রে তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্য ছিল। মহারাষ্ট্রের এক অস্পৃশ্য মাহার পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা একজন সামরিককর্মী ছিলেন। সেই সূত্রে তিনি পাশ্চাত্য শিক্ষার সুযোগ পান। তাঁর মেধার পরিচয় পেয়ে বরোদার মহারাজা তাঁকে উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকা পাঠান। শিক্ষাশেষে তিনি বরোদা রাজ্যের সামরিক সচিব ও পরে বোম্বাই-এর সিডেনহাম কলেজে অর্থনীতি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক হন।

আন্দোলন ও আম্বেদকরের ভূমিকা

এরপর আম্বেদকর দলিতদের অধিকারের জন্য বিভিন্ন আন্দোলন শুরু করেন। এগুলি হল–

দলিত সম্মেলন: ইতিপূর্বে দলিতদের উন্নতির জন্য জাস্টিস পার্টি গঠিত হয়েছিল ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে। এই দলের উদ্যোগে ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে নাগপুরে দলিত নেতাদের সম্মেলন হয়। সম্মেলনে সর্বভারতীয় নিপীড়িত শ্রেণির সমিতি গঠিত হয়। সমিতির সভাপতি হন এম সি রাজা এবং সহ-সভাপতি হন আম্বেদকর।

অস্পৃশ্য আন্দোলন:
১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে আম্বেদকর অস্পৃশ্য আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহণ করেন। তিনি ‘বহিষ্কৃত ভারত’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। তিনি প্রচার করেন, হিন্দুধর্ম হল নিম্নবর্ণের মানুষদের উপর আধিপত্য স্থাপনকারী একটি ধর্ম। অস্পৃশ্যতার মূল হল ‘মনুস্মৃতি’। এজন্য তিনি ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে ‘মনুস্মৃতি’ গ্রন্থ পুড়িয়ে দেন।

সত্যাগ্রহ আন্দোলন : তিনি মহারাষ্ট্রের কোলাবা জেলায় অস্পৃশ্যদের পানীয় জল ব্যবহারের দাবিতে মাহার সত্যাগ্রহ করেন ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে। কলারাম মন্দিরে প্রবেশের দাবিতে সত্যাগ্রহ করেন ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে।

সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা: লন্ডনে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকে আম্বেদকর যোগ দেন। তাঁর চেষ্টায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী নিম্নবর্ণের মানুষদের জন্য আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেন। গান্ধিজি প্রতিবাদে অনশন শুরু করেন। পুনা চুক্তির মাধ্যমে ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে এই সমস্যার সমাধান করা হয়। স্থির হয় বাঁটোয়ারা নীতি দ্বারা প্রাপ্ত আসনসংখ্যার দ্বিগুণ আসন দিতে হবে এই তফশিলিদের।

দল গঠন

১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে আম্বেদকর সর্বভারতীয় নিপীড়িত শ্রেণির কংগ্রেস (AIDCC), ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীন শ্রমিক দল (ILP) ও ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে নিখিল ভারত তফশিলি সংগঠন (AISCF) প্রতিষ্ঠা করেন। ফলে কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব তৈরি হয়।

মূল্যায়ন

এভাবে আম্বেদকর দলিতদের অধিকার অর্জনের জন্য সংগ্রাম করেন। কংগ্রেস আম্বেদকরের প্রতিদ্বন্দ্বীরূপে জগজ্জীবন রামকে তুলে ধরে স্বার্থসিদ্ধি করে। আম্বেদকর সংবিধানের খসড়া কমিটির সভাপতিও ছিলেন। ফলত, তিনি সংবিধানে দলিতদের অধিকারগুলি সুরক্ষিত করেন।

Leave a Comment