টীকা লেখো শ্রমিক আন্দোলন ও AITUC |
ভূমিকা
শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের (AITUC) প্রতিষ্ঠা। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের ৩০ অক্টোবর বোম্বাই শহরে লালা লাজপত রায়ের সভাপতিত্বে এর প্রথম অধিবেশন বসে। চমনলাল ছিলেন AITUC-এর প্রথম সাধারণ সম্পাদক। সারা দেশ থেকে ৮০৬ জন প্রতিনিধি এই সমাবেশে যোগ দেন। এই ধরনের একটি সর্বভারতীয় শ্রমিক সংগঠনের স্বপ্ন দেখেছিলেন লোকমান্য বাল গঙ্গাধর তিলক।
AITUC-র নেতৃত্ব
লালা লাজপত রায় ছাড়াও অন্যান্য যেসকল বিশিষ্ট জাতীয় স্তরের নেতা এই অধিবেশনে যোগ দিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে মোতিলাল নেহরু, বল্লভভাই প্যাটেল, অ্যানি বেসান্ত, জিন্না প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। AITUC-এর মাধ্যমে শ্রমিকরা একটি শক্তিশালী সর্বভারতীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে সক্ষম হয়।
কংগ্রেসের জাতীয় নেতৃবৃন্দ এই AITUC-এর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকার ফলে শ্রমিক আন্দোলনে গতি আসে।
লালা লাজপত রায় ও তাঁর চিন্তাধারা
সভাপতির ভাষণে লালা লাজপত রায় ভারতের শ্রমিকশ্রেণিকে সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি আশা প্রকাশ করতেন যে, যদিও নেতৃত্বের জন্য শ্রমিকরা কিছুদিন বুদ্ধিজীবীদের সাহায্য ও সামর্থ্যের উপর নির্ভরশীল থাকবে, তথাপি শেষ পর্যন্ত তারা নিজেরাই নিজেদের নেতা খুঁজে বের করতে সক্ষম হবে।
পরবর্তী সময়ের নেতৃত্ব
লালা লাজপত রায় ছাড়াও এই সময় কংগ্রেসের অন্যান্য বিশিষ্ট নেতারাও শ্রমিক আন্দোলন ও AITUC-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন চিত্তরঞ্জন দাশ, সি এফ অ্যান্ড্রুজ, যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত, সুভাষচন্দ্র বসু, জওহরলাল নেহরু ও সত্যমূর্তি প্রমুখ। AITUC-এর তৃতীয় এবং চতুর্থ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন চিত্তরঞ্জন দাশ। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের বাৎসরিক অধিবেশনে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস AITUC-কে স্বাগত জানায় এবং ট্রেড ইউনিয়নের কাজে সাহায্য ও সহযোগিতা করার জন্য বিশিষ্ট কংগ্রেস নেতাদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। বিভিন্ন দিকে সংগঠিত ও অসংগঠিত ক্ষেত্রে, দক্ষ কর্মী ও অদক্ষ কর্মীবৃন্দ সবাই এর সদস্য হওয়ার জন্য হাত বাড়াতে থাকে। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে ১২৫টি ইউনিয়ন গড়ে ওঠে এবং নথিবদ্ধ সদস্যসংখ্যা সেই সময় বেড়ে দাঁড়ায় ২,৫০,০০০-এ।
মূল্যায়ন
এইভাবে ভারতে শ্রমিকশ্রেণির বিক্ষোভ আন্দোলন AITUC-এর মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট পথে পরিচালিত হয়েছিল। শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে তাই এর অবদান অনস্বীকার্য।