জোর করে চাপিয়ে দেওয়া শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীর পূর্ণাঙ্গ চেতনার বিকাশ ঘটে না-‘দাম’ ছোটোগল্প অবলম্বনে আলোচনা করো। |
ভূমিকা
বর্তমান শিক্ষার লক্ষ্য শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীন বিকাশসাধন করা। শিক্ষার এই লক্ষ্যকে সার্থক করে তোলার জন্য শিক্ষার পরিবেশকে হতে হবে আনন্দপূর্ণ। বর্তমানে শিক্ষার্থীর আগ্রহ- মনোযোগ প্রাধান্য পায় শিক্ষার পরিকাঠামোয়। কিন্তু নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘দাম’ গল্পে যে শিক্ষাব্যবস্থার পরিচয় ফুটে উঠেছে তা কখনোই শিক্ষার্থীর পূর্ণাঙ্গ চেতনার বিকাশে সহায়ক নয়।
শিক্ষার্থীর পূর্ণাঙ্গ বিকাশ ঘটে না
‘দাম’ গল্পে কথকের ছেলেবেলার স্কুলের অঙ্কের মাস্টারমশাই তাঁর নাছোড় স্বভাব নিয়ে যে-কোনো উপায়ে ছেলেদের অঙ্ক শেখাতে চাইতেন। মাস্টারমশাই প্রকাণ্ড হাতের প্রচণ্ড চড় মেরে অঙ্ক না পারা ছাত্রদের কাঁদিয়ে দিতেন। পুরুষ মানুষ হয়ে অঙ্ক কষতে না পারাটা তাঁর কাছে ছিল অকল্পনীয় ব্যাপার। অঙ্ক কষে না পারা ছেলেদের তিনি পা ধরে পুকুরে ছুঁড়ে ফেলে দেবার ভয় দেখাতেন। তাঁর ভয়ে তটস্থ হয়ে থাকত স্কুলের মেধাবী ছাত্ররাও, যারা অঙ্কে একশোর মধ্যে একশো পায়। প্রচণ্ড শাস্তি-শাসনে মাস্টারমশাই ছাত্রদের কাছে বিভীষিকা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। ম্যাট্রিকুলেশন পাস করার পর মাস্টারমশাই-এর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন কথক অঙ্ক বিষয়টি না নিয়ে। সর্বোপরি মাস্টারমশাই-এর ভয়ংকর শাসনে অঙ্ক বিষয়টিই ভয়াবহ হয়ে দাঁড়িয়েছিল কথকের কাছে। মাস্টারমশাই-এর প্রহার কথককে অঙ্ক শেখাতে তো পারেইনি, উপরন্তু অঙ্কের সবচেয়ে সহজ হিসেব-নিকেশও ভুলতে বসেছিলেন তিনি। অভিজ্ঞতা দিয়ে কথক বুঝেছিলেন শিক্ষা জোর করে হয় না, তার জন্য প্রয়োজন আনন্দপূর্ণ পরিবেশ। এই জীবন অভিজ্ঞতা থেকে তাই কথক বলেন-‘অহেতুক তাড়না করে কাউকে শিক্ষা দেওয়া যায় না। গাধা পিটিয়ে ঘোড়া করতে গেলে গাধাটাই পঞ্চত্ব পায়।’