ছাপা বইয়ের সঙ্গে শিক্ষাবিস্তারের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করো। |
ছাপা বই ও শিক্ষাবিস্তার পরস্পর নির্ভরশীল
ছাপা বই আধুনিক শিক্ষাবিস্তারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য
আধুনিক শিক্ষাবিস্তারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল- ছাপা বইয়ের মাধ্যমে শিক্ষার বিস্তার। আগে পুথির মাধ্যমে শিক্ষাপ্রদান করা হত, কিন্তু তখন শিক্ষা অল্পসংখ্যক মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। ছাপা বইয়ের মাধ্যমে আধুনিক শিক্ষার ব্যাপক বিস্তার সম্ভব হয়।
ছাপা বইয়ের মাধ্যমে শিক্ষাবিস্তারের সুবিধা
সহজলভ্যতা: ছাপা বই সহজে ও সস্তায় বাজার থেকে কেনা যায়। এর আগে পুথি সহজে পাওয়া যেত না।
লেখার স্পষ্টতা: ছাপা বইয়ের লেখা স্পষ্ট। এর ফলে ছাত্রছাত্রীরা সঠিকভাবে লিখতে ও পড়তে পারে। এর আগে হাতের লেখা দেখে ও শুনে পড়াশোনা করতে হত।
বিভিন্ন বিদ্যালয়ে শিক্ষার সমতা: একই ধরনের অনেক বই ছাপার সুবিধার জন্য সারা দেশে একই ধরনের শিক্ষার বিস্তার সম্ভব হয়। বিভিন্ন বিদ্যালয়ে একই ধরনের বইয়ের ব্যবহার সমগ্র দেশে শিক্ষার ক্ষেত্রে সমতা এনেছিল।
ছাপা বইয়ের মাধ্যমে শিক্ষার বিস্তারে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা
শ্রীরামপুর মিশন প্রেস: বই প্রকাশ করে শিক্ষার বিস্তারের ক্ষেত্রে শ্রীরামপুর মিশনের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শ্রীরামপুর মিশনের উদ্যোগে সংস্কৃত থেকে বাংলায় অনুবাদ করে ‘রামায়ণ’, ‘মহাভারত’, ‘হিতোপদেশ’, ‘বত্রিশ সিংহাসন’, ‘ভূগোল’, ‘পদার্থবিদ্যা’, ‘জ্যোতির্বিদ্যা’ প্রভৃতি বই প্রকাশ করা হয়। শ্রীরামপুর মিশন বিভিন্ন ধরনের বই ছাপার ফলে শিক্ষাবিস্তারের সহায়ক হয়েছিল। উইলিয়ম কেরির পুত্র ফেলিক্স কেরি বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান বই রচনার পথপ্রদর্শক ছিলেন।
ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি: ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে পাঠ্যবই জোগান দেওয়ার উদেশ্যে ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি-র প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল স্কুল পাঠ্যবই তৈরি করে সুলভ মূল্যে অথবা বিনামূল্যে বিতরণ করা ও শিক্ষার প্রসার ঘটানো।
এ ছাড়া ক্যালকাটা খ্রিস্টান ট্রাস্ট অ্যান্ড বুক সোসাইটি (Calcutta Christian Trust & Book Society, ১৮২৩ খ্রি.), ভার্নাকুলার লিটারেচার সোসাইটি (Vernacular Literature Society, ১৮২০ খ্রি.)-সহ অনেক প্রতিষ্ঠান বই তৈরি ও সরবরাহ করে শিক্ষার প্রসারে সহায়তা করে।