ছাপাখানা ও প্রকাশনার ক্ষেত্রে বাঙালি উদ্যোগের পরিচয় দাও
|
ভূমিকা
বাংলায় ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা ও প্রকাশনার ক্ষেত্রে ইউরোপীয় উদ্যোগীরা অগ্রণী ছিলেন। কিন্তু অল্পকালের মধ্যে বাঙালিরাও এই কাজে এগিয়ে আসেন এবং বিশিষ্ট স্থান দখল করেন।
ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা
① ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রথম বাঙালি ছিলেন গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য। প্রথমে তিনি শ্রীরামপুর মিশনের ছাপাখানায় কম্পোজিটার ছিলেন। পরে তিনি ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে নিজে একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর ছাপাখানার নাম ছিল ‘বাঙ্গাল গেজেটি প্রেস’ বা ‘আপিস’। ② লেখক রাজকৃয় রায় ‘বীণাযন্ত্র’ নামে একটি ছাপাখানা গড়ে তোলেন। ③ পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও মদনমোহন তর্কালঙ্কার ‘সংস্কৃত যন্ত্র’ নামে একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন। ④ সাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ‘ইউ রায় অ্যান্ড সন্স’ (U Ray & Sons) নামে একটি বিরাট ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে।
প্রকাশনা
এইসব ছাপাখানা থেকে বহু বই এবং পত্রপত্রিকা প্রকাশিত হত। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-① গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য নিজে কয়েকটি বই লিখে প্রকাশ করেন। ② রাজকৃষ্ণ রায় তাঁর লেখা বিভিন্ন বই ছাপিয়ে প্রকাশ করেন। ③ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও মদনমোহন তর্কালঙ্কার নিজেদের লেখা বিভিন্ন বইয়ের প্রকাশনা শুরু করেন। ④ উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ও তাঁর পুত্র সুকুমার রায় শিশুসাহিত্য ও কৌতুক রচনা প্রকাশ করে বিশেষ খ্যাতিলাভ করেন।
এ ছাড়া হরচন্দ্র রায়, বিশ্বনাথ দেব, দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ, – শিশির কুমার ঘোষ, কাঙাল হরিনাথ প্রমুখ মুদ্রণ ও প্রকাশনার ক্ষেত্রে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী ছিলেন।
উপসংহার
এভাবে বাঙালিরা মুদ্রণ ও প্রকাশনার ক্ষেত্রে বিশিষ্ট – স্থান অধিকার করেছিলেন। সেই সূত্র ধরেই বাংলা ভাষার প্রচার ও – সাহিত্যসৃষ্টি ব্যাপকভাবে শুরু হয় এবং বাংলায় নবজাগরণের সূত্রপাত হয়।