গদর পার্টি সম্পর্কে কী জানো সংক্ষেপে লেখো |
ভূমিকা
ভারতের ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র বৈপ্লবিক আন্দোলনের ইতিহাসে গদর পার্টি-র গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। বিশ শতকে ভারতে একদিকে যেমন বিপ্লবী ভাবধারা তথা আন্দোলনের প্রসার ঘটছিল তেমনি ভারতের বাইরে বিদেশের মাটিতেও বিপ্লবী ভাবাদর্শ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছিল। গদর পার্টির প্রতিষ্ঠা ছিল বিদেশের মাটিতে এই ভাবাদর্শ বিস্তারের এক সার্থক রূপায়ণ।
গদর পার্টির ভূমিকা
ভারতের বিপ্লবী আন্দোলনের ইতিহাসে গদর পার্টি-র অবদান অনস্বীকার্য।
প্রতিষ্ঠা
১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে লালা হরদয়াল-এর সক্রিয় উদ্যোগে আমেরিকার সানফ্রান্সিসকো শহরে গদর পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই দলের প্রথম সভাপতি হন মোহন সিং ভাকনা এবং সম্পাদকের পদ অলংকৃত করেন লালা হরদয়াল। গদর পার্টি প্রতিষ্ঠার স্বল্পকালের মধ্যেই বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রায় ১৫ হাজার স্বাধীনতাকামী প্রবাসী ভারতীয় এই পার্টির সদস্যপদ গ্রহণ করেন।
পত্রিকা প্রকাশ
১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে গদর পার্টি প্রতিষ্ঠার পর এই পার্টির প্রধান মুখপত্র হিসেবে গদর পত্রিকা প্রকাশিত হয়। ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটানোর উদ্দেশ্যে বিপ্লবী অগ্নিমন্ত্র প্রচারিত হত এই পত্রিকায়। ইংরেজি ‘গদর’ পত্রিকা হিন্দি, উর্দু, গুজরাটি প্রভৃতি ভারতীয় ভাষায় অনুবাদ করে আমেরিকা, ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়ার প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যে এবং ভারতবর্ষে ছড়িয়ে দেওয়া হত।
বিপ্লবী কার্যকলাপের প্রসার
কালক্রমে গদর পার্টি আমেরিকা ও কানাডার প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয় চেতনা বিকাশে বিশেষভাবে সাহায্য করেছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে গদর পার্টির সশস্ত্র বৈপ্লবিক কার্যকলাপ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায় এবং পার্টির বহু সদস্য ভারতে প্রত্যাবর্তন করে।
লালা হরদয়ালের বিরুদ্ধে মামলা
১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ১৬ মার্চ আমেরিকায় ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে উত্তেজনা সৃষ্টির অপরাধে মার্কিন সরকার লালা হরদয়াল-কে গ্রেফতার করে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা শুরু করে। জামিনে মুক্তিলাভ করে তিনি সুইজারল্যান্ডে চলে যান। এই সময়ে মামলার পর ব্রিটিশ সরকার গদর পার্টি ও পত্রিকাকে নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করে।
উপসংহার
এভাবে বিদেশের মাটিতে ও ভারতবর্ষে বিপ্লবী চেতনা বিস্তাবে গদর পার্টির অবদান ছিল অবিস্মরণীয়।