‘খেয়া’ কবিতাটিতে কবির সমাজজীবন চিত্রের মূল ভাবনাটি পরিস্ফুট করো

'খেয়া' কবিতাটিতে কবির সমাজজীবন চিত্রের মূল ভাবনাটি পরিস্ফুট করো
‘খেয়া’ কবিতাটিতে কবির সমাজজীবন চিত্রের মূল ভাবনাটি পরিস্ফুট করো

ভূমিকা 

পার্থিব জগতের অনিবার্য বাস্তবতার মাঝে দাঁড়িয়ে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর রোমান্টিক অন্তর্দৃষ্টিকে প্রসারিত করেছেন। অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যতের বিস্তৃত কালে খুঁজতে চেয়েছেন তিনি মানবসভ্যতার বিরামহীন ধারার স্বরূপটিকে-সেই অনন্য অন্বেষণের কাব্যিক প্রকাশ ঘটেছে ‘খেয়া’ নামক সনেটটির ছোটো পরিসরে।

প্রামীণ সমাজচিত্র

চিরন্তন গ্রামীণ সমাজচিত্রের প্রতিচ্ছবি উঠে এসেছে খেয়াঘাটের এপার-ওপারে। দুই তীরে দুখানি গ্রাম রেখে নদীটি প্রবাহিত হয়ে গেছে। সুস্থ জীবনের অনিবার্য সম্পর্ক রক্ষার তাগিদে, জীবনধারণে পরস্পরের নির্ভরশীলতার জন্য গ্রামের মানুষগুলো এপার-ওপার করে খেয়া নৌকাখানির মাধ্যমে। জীবনধারণের প্রয়োজনীয়তার জন্য এপার ছুটে যায় ওপারে, ওপার আসে এপারে।

মানবসভ্যতার রূপক

কিন্তু গ্রাম দুটির রূপকে আসলে রবীন্দ্রনাথ মানবসভ্যতায় মানুষের নিরন্তর আসা-যাওয়াকেই ইঙ্গিত করেছেন। জীবনরূপ নদীতে জীবনেরই তরি বেয়ে মানুষ জন্ম থেকে যাত্রা করে। আর সে যাত্রা মৃত্যুতে মিলিয়ে যায়। তাই দুখানি গ্রাম দুজনের প্রতি চেয়ে মানবসভ্যতার রূপক থাকে অপলক দৃষ্টিতে, তাই তাদের মধ্যে

জানাশোনা যুগ-যুগান্তরের, তাই তাদের সম্পর্ক নিবিড়। সেই শাশ্বত পরিচয়ের ডোরে তারা উভয়কেই বেঁধে রেখেছে। তারা একে অপরের উপর নির্ভরশীল, একের বিহনে অন্য অসম্পূর্ণ। কবি নদীঘাটে একাকী বসে উদাস নয়নে বিষণ্ণ সেই সত্যকেই উদ্‌ঘাটন করলেন ইঙ্গিতপূর্ণ এই নির্মল নিসর্গ মাঝে চিত্রিত সমাজ-অবয়বের মাধ্যমে।

Leave a Comment