খরা কী? খরা সৃষ্টির কারণগুলি লেখো। |
খরা (Drought):
ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তরের সংজ্ঞানুযায়ী কোনো অঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম (75%-এর কম) বৃষ্টি হলে বা বহুদিন ধরে বৃষ্টি না হলে অস্বাভাবিক শুষ্ক অবস্থার সৃষ্টি হয়, তাকে খরা বলে। যেমন– ভারতের পশ্চিমঘাট পর্বতের পূর্বে 300 km বিস্তৃত অঞ্চল খরাপ্রবণ।
খরা সৃষ্টির কারণ
খরা সৃষ্টির পিছনে একাধিক প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট কারণ রয়েছে।
খরা সৃষ্টির প্রাকৃতিক কারণ:
• বৃষ্টিপাতের স্বল্পতা: সঠিক সময়ে বর্ষা না এলে, বর্ষাকালে অনেকদিন ধরে বৃষ্টি না হলে, সঠিক সময়ের আগে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেলে খরা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
• অতিরিক্ত বাষ্পীভবন বৃষ্টিপাতের চেয়ে বাষ্পীভবনের পরিমাণ বেশি হলে খরা সৃষ্টি হয়।
• বিশ্ব উষ্ণায়ন: বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে আবহাওয়া ক্রমশ উন্ন ও শুষ্ক হয়ে উঠছে। খরা সৃষ্টির প্রবণতা বাড়ছে।
• এল-নিনোর প্রভাব: উষ্ণ এল-নিনো সমুদ্রস্রোত স্থানীয় ও আঞ্চলিক স্তরের আবহাওয়ার ওপর প্রভাব বিস্তার করে। যেসব বছরগুলিতে প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব প্রান্তে এল-নিনোর আবির্ভাব হয় সে বছর ভারতে মৌসুমি বায়ুর অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি পায় ও খরার সম্ভাবনা বাড়ে। এল-নিনোর প্রভাবে 2009 সালে ভারতের 250টি জেলায় খরার সৃষ্টি হয়।
খরা সৃষ্টির মনুষ্যসৃষ্ট কারণ :
• অরণ্য ধ্বংস: অরণ্য ধ্বংসের ফলে বাতাসে জলীয়বাষ্পের জোগান কমে যায় এবং বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হ্রাস পায়। ফলে খরা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
• শিল্পায়ন ও নগরায়ণ: নগরায়ণ ও শিল্পায়নের ফলে বাতাসের তাপমাত্রা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। এই ক্রমবর্ধমান উন্নতা খরা পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।
• অতিরিক্ত ভূ-গর্ভস্থ জলের ব্যবহার: ভূগর্ভস্থ জল অত্যধিক পরিমাণে ব্যবহার করার ফলে মাটির স্তরগুলি শুকোতে শুরু করেছে যা ভবিষ্যতে খরার ন্যায় পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে।
• ভৌমজল সংকট: অতিরিক্ত ভৌমজল ব্যবহারের ফলে ভূগর্ভস্থ জলস্তর নীচে নেমে যায় এবং মাটির আর্দ্রতা কমে যায়। ফলস্বরূপ খরা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
• বায়ুদূষণ: বায়ুদূষণের ফলে বাতাসে অ্যারোসলের (ধূলিকণা, লবণকণা ইত্যাদি) পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে জলীয়বাষ্পের শোষণ বেড়ে যায়। ফলে, অধঃক্ষেপণের পরিমাণ হ্রাস পায় এবং খরার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।