কীভাবে IACS প্রতিষ্ঠিত হয় তা বিশ্লেষণ করো

কীভাবে IACS প্রতিষ্ঠিত হয় তা বিশ্লেষণ করো
কীভাবে IACS প্রতিষ্ঠিত হয় তা বিশ্লেষণ করো।

ভূমিকা

বিজ্ঞানশিক্ষার একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য কলকাতা শহরেই প্রথম পরিকল্পিত উদ্যোগ নেওয়া হয়। ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে ‘ক্যালকাটা জার্নাল অফ মেডিসিন’ পত্রিকায় এক প্রবন্ধে ডা. মহেন্দ্রলাল সরকার এক জাতীয় প্রতিষ্ঠান স্থাপনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। ফলে এদেশের বিজ্ঞানের উন্নতিতে এবং জনগণের মধ্যে বিজ্ঞানশিক্ষা প্রসারে এ জাতীয় প্রতিষ্ঠান যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে সে-কথা সবাই উপলব্ধি করে।

IACS প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট

বিজ্ঞানভিত্তিক চিন্তাভাবনার উন্মেষ: অশিক্ষা এবং কুসংস্কারে আচ্ছন্ন আমাদের সমাজে নিরবচ্ছিন্নভাবে বিজ্ঞান প্রচার সে সময় নেহাত সহজ কাজ ছিল না। ঊনবিংশ শতাব্দী ছিল নব চিন্তাভাবনার উন্মেষের কাল। মহেন্দ্রলাল সরকারের দৃষ্টি ছিল বিজ্ঞানের স্বচ্ছ, উদার, মুক্ত এবং সংস্কারহীন বিস্তীর্ণ প্রান্তরের দিকে।

মহেন্দ্রলাল সরকারের উদ্যোগ: তিনি যখন ভারতীয়দের নিজস্ব এক জাতীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য আবেদন করেন তখন তাঁর বয়স মাত্র ৩৪। পেশায় চিকিৎসক হলেও সমাজসংস্কারের সঙ্গে তিনি ব্যাপকভাবে যুক্ত ছিলেন। তিনি তাঁর জীবিকার পাশাপাশি এদেশে বিজ্ঞানের উন্নতি এবং সেইসঙ্গে বিজ্ঞান মানসিকতা গঠনের কাজে সচেষ্ট হন এবং তা নিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকেন। আধুনিক বিশ্বে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে বিজ্ঞানসাধনা যে আবশ্যক, মহেন্দ্রলাল ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে এই সত্য উপলব্ধি করেন।

মহেন্দ্রলাল ১৮৭০-এর দশকে হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকায় বিজ্ঞানের উন্নতির জন্য এক রেজিস্টার্ড সোসাইটির ‘প্রসপেকটাস’ প্রকাশ করেন এবং জনসাধারণের কাছে চাঁদার জন্য আবেদন জানান। বলা হয়, সোসাইটির নামকরণ করা হবে ‘Indian Association for the Cultivation of Science (IACS) |

১৮৭০ খ্রিস্টাব্দের ২৪ জানুয়ারি প্রথম চাঁদার খাতা খোলা হয়। উত্তরপাড়ার জয়কৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়, রাজা কমলকৃষ্ণ বাহাদুর, সতীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কালীকৃষ্ণ ঠাকুর, বিদ্যাসাগর, গিরীশচন্দ্র মিত্র, রমেশচন্দ্র মিত্র প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ বড়ো অঙ্কের টাকা চাঁদা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হন।

১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে চাঁদা হিসেবে মোট ৮০,০০০ টাকা সংগৃহীত হয়। ১৮৭৫ এবং ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে অর্থ প্রদানকারী এই সকল ব্যক্তিরা প্রস্তাবিত অ্যাসোসিয়েশনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ এবং সেই সঙ্গে বিবিধ পরিকল্পনার রূপদানের জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হাউসে মিলিত হন। ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দের ১৫ জানুয়ারি বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর টেম্পলর-এর সভাপতিত্বে ও কলকাতার বিশিষ্ট নাগরিকদের উপস্থিতিতে প্রস্তাবিত সংস্থাটির প্রতিষ্ঠা হয়। মহেন্দ্রলাল সরকারের মস্তিষ্কপ্রসূত নামেই সংস্থাটির নামকরণ করা হয় ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স নামে। এই সংস্থাটির উদ্দেশ্য ভারতীয় নাগরিকদের বিজ্ঞানের যাবতীয় বিষয়ে মৌলিক গবেষণার সুযোগ দান এবং সেই গবেষণালব্ধ ফলের বিভিন্ন প্রয়োগের মাধ্যমে দৈনন্দিন জীবনে সুখস্বাচ্ছন্দ্য আনয়ন করা।

Leave a Comment