1802 খ্রিস্টাব্দের পরবর্তী সময় নেপোলিয়ান ফরাসি সৈন্যবাহিনী ও কূটনীতির সাহায্যে কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই একাধিকবার ইউরোপের বিভিন্ন রাজ্যের সীমান্ত পরিবর্তন করেন।
ইতালীয় প্রজাতন্ত্র:
ইটালির লোম্বার্ডিকে ভিত্তি করে সিজালপাইন প্রজাতন্ত্রের সৃষ্টি করেন। এর মধ্যে অস্ট্রিয়ার হাতে ভেনিসকে সমর্পণ করা হয় ও ফ্রান্সের অন্তর্ভুক্ত হয় পিডমন্ট। 1802 খ্রিস্টাব্দে সিজালপাইন প্রজাতন্ত্রকে ইতালীয় প্রজাতন্ত্র আখ্যা দেওয়া হয়।
সুইস কনফেডারেশন:
ইটালির উত্তরে প্রজাতন্ত্রের যুগের হেলেভেটিক প্রজাতন্ত্রকে সুইস কনফেডারেশনে পরিণত করা হয়। এই কনফেডারেশনের উনিশটির মতো ক্যানটন ফ্রান্সের ওপর নির্ভরশীল ছিল।
হল্যান্ড:
বেলজিয়ামের উত্তরে অবস্থিত বাটাভীয় প্রজাতন্ত্রকে 1804 খ্রিস্টাব্দে হল্যান্ড রাজ্যে রূপান্তরিত করে নেপোলিয়ান তাঁর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা লুইকে হল্যান্ডের সিংহাসনে অভিষিক্ত করেন।
কনফেডারেশন অফ রাইন:
জার্মানির রাজনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তনস্বরূপ নেপোলিয়ান 1806 খ্রিস্টাব্দে রাইন কনফেডারেশন সংগঠিত করেন। প্রথমে এই কনফেডারেশন 16টি জার্মান রাজ্য ও পরবর্তীকালে 18টি জার্মান রাজ্য নিয়ে গঠিত হয়। কনফেডারেশনের সদস্যরা সকলেই ছিলেন নেপোলিয়ানের অনুগত ও নামমাত্র স্বাধীনতার অধিকারী।
ওয়েস্টফেলিয়া:
1807 থেকে 1810 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ব্লুনসউইগ, হ্যানোভার, হেসে-কাসেল ও রেনিস’ প্রদেশ ইত্যাদি থেকে কিছু কিছু রাজ্যাংশ নিয়ে নেপোলিয়ান ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্য গঠন করেন ও ভ্রাতা জেরোমকে সিংহাসনে বসান।
ওয়ারসর গ্র্যান্ড ডাচি:
প্রাশিয়া অধিকৃত পোল্যান্ড নিয়ে নেপোলিয়ান তৈরি করেন ওয়ারসর গ্র্যান্ড ডাচির সংগঠন ও এটিকে স্যাক্সনির রাজার শাসনাধীনে রাখেন।
নেপোলিয়ানের সাম্রাজ্যসীমা :
এইভাবে রাশিয়া ও নেপোলিয়ানের সাম্রাজ্যের মধ্যে একটি অন্তর্বর্তী রাজ্য গঠনের কাজ সম্পূর্ণ হয়। এ ছাড়া 1805 খ্রিস্টাব্দে ফরাসি সাম্রাজ্য জেনোয়াকে, 1808 খ্রিস্টাব্দে পার্মা, পিয়াসেঞ্জা ও টাস্কানি, 1809 খ্রিস্টাব্দে পোপের রাজ্য এবং অ্যাড্রিয়াটিক সমুদ্র অতিক্রম করে ক্রোশিয়া, ক্যারিনথিয়া ও ডালমেশিয়াসহ ইলিরীয় প্রদেশগুলিকে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনেন। তাঁর এই রাজ্যের সীমানা 1811 খ্রিস্টাব্দ নাগাদ অ্যাড্রিয়াটিক সমুদ্রের তীর ঘেঁষে ভেনেশিয়া, অস্ট্রিয়ার সীমান্তবর্তী প্রত্যন্ত অঞ্চল, এ্যাস্কোপ ও ট্রেনটিনো পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল।
সমালোচনা:
ঐতিহাসিকগণ মনে করেন এই পরিবর্তনের পিছনে রোমান সাম্রাজ্যের স্মৃতির প্রেরণা কাজ করেছিল। ফিলিপ ওয়াবেলা মনে করেন, নেপোলিয়নীয় সাম্রাজ্য বিপ্লবের ধারাবাহিকতাকে ছিন্ন না করে বিপ্লবকে বিস্তৃততর করেছে। নেপোলিয়ান তাঁর অধীনস্থ সমস্ত দেশে রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে অর্থবহ পরিবর্তন নিয়ে এসেছিলেন। উপরন্তু ইটালি, হল্যান্ড, বেলজিয়াম, জার্মানি প্রভৃতি স্থানে নেপোলিয়ানের সংস্কার কর্মসূচি চলেছিল। সমালোচকদের মতে, ইউরোেপ পুনর্গঠনের নামে নেপোলিয়ান। গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করেছিলেন। জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে তিনি স্বীকৃতি দেননি। তাঁর কাছে সাম্রাজ্যের অর্থ ছিল ব্যক্তিগত আধিপত্য ও ফরাসি জাতির সামরিক আধিপত্য বিস্তার। নেপোলিয়ান নিজে মন্তব্য করেছিলেন যে, ইউরোপীয় জাতিসমূহের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করার জন্যই তিনি সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন।
FAQ
প্রশ্নঃ নীলনদের যুদ্ধে নেপোলিয়ন কার কাছে পরাজিত হন?
ইংরেজ সেনাপতি নেলসনের কাছে।
প্রশ্নঃ সিজালপাইন প্রজাতন্ত্র কোথায় হয়?
ইতালির পো নদী উপত্যকায়।
প্রশ্নঃ নেপোলিয়ন ইউরোপের কোন কোন রাষ্ট্র দখল করেন?
ইতালি, স্পেন, জাপান।