কিষানসভা প্রতিষ্ঠার প্রধান উদ্দেশ্য কী ছিল? |
ভূমিকা
চাষবাস যাদের পেশা তারা অর্থাৎ কৃষিজীবী সম্প্রদায় কিষান বা কৃষক নামে পরিচিত। ভারতের বেশিরভাগ মানুষ হল পেশায় কৃষক বা কিষান। ভারতে ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠার পর এই শ্রেণি প্রথম বিদ্রোহ করে। বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত এই শ্রেণিকে রাজনীতিতে যুক্ত করার পরিকল্পনা করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।
কিষানসভা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য
ভারতে কিষানসভা প্রতিষ্ঠার বিভিন্ন উদ্দেশ্য ছিল। সেগুলি হল–
গৌরবময় ভূমিকা
বাংলা তথা ভারতে ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর প্রথম প্রতিক্রিয়া দেখায় কৃষকশ্রেণি। তারা মাঝে মাঝেই বিক্ষোভ-বিদ্রোহ করে। শোষিত, দরিদ্র এই কৃষকেরা ছিল সংখ্যায় বিপুল। পুলিশ-সৈন্যদের সামনে অসম শক্তিতে তারা লড়াই করে। গৌরবময় ঐতিহ্যের অধিকারী এই শ্রেণির সমর্থন লাভের জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সক্রিয় হয়ে ওঠে। সেজন্য তারা কিষানদের সংগঠিত করার কাজ শুরু করে।
করভার লাঘব
ভারতে প্রচলিত ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থাগুলিতে রাজস্বের হার ছিল চড়া। এর ফলে কৃষকের অবস্থা সংকটজনক হয়ে ওঠে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে শস্যহানি হলেও সরকার রাজস্ব আদায় করত। রাজস্ব মকুব করা এবং কৃষকদের কল্যাণের জন্য কয়েকটি আঞ্চলিক আন্দোলন হয়। যেমন- গান্ধিজির নেতৃত্বে চম্পারণ ও খেদা সত্যাগ্রহ, স্বামী বিদ্যানন্দের নেতৃত্বে দ্বারভাঙার কৃষক আন্দোলন, রাজস্থানে জয়নারায়ণ ব্যাসের বিজোলিয়া সত্যাগ্রহ, স্বামী সহজানন্দ সরস্বতীর বিহার কৃষক আন্দোলন প্রভৃতি এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের উদ্যোগ
কমিউনিস্ট পার্টি কৃষক-শ্রমিকদের সংগঠিত করার জন্য ওয়ার্কার্স স্বামী সহজানন্দ সরস্বতী অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি প্রতিষ্ঠা করে ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে বিহার প্রাদেশিক কিষানসভা গঠন করেন স্বামী সহজানন্দ সরস্বতী। অধ্যাপক এন জি রঙ্গ ‘অন্ধ্র প্রাদেশিক রায়তসভা’ গঠন করেন ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে। মদনমোহন মালব্য প্রতিষ্ঠা করেন যুক্তপ্রদেশ কিষানসভা (১৯১৮ খ্রি.)। বাবা রামচন্দ্র ছিলেন অযোধ্যা কিষানসভার প্রতিষ্ঠাতা। এ ছাড়া আলি মুসালিয়র মোপালা কৃষকদের সংগঠিত করেন (১৯২১ খ্রি.)। পরে এই আঞ্চলিক কৃষক সংগঠনগুলিকে জাতীয় কংগ্রেস প্রভাবিত করে। ফজলুল হক ‘কৃষক-প্রজাদল’ গঠন করেন।
কৃষক কল্যাণ
কংগ্রেসের নেতৃত্বে বেশিরভাগ কৃষক সংগঠন নিয়ে একটি কেন্দ্রীয় কিষান সংগঠন গড়ে তোলা হয় (১৯৩৬ খ্রি.)। জমিদারি প্রথার বিলোপ, রাজস্ব হ্রাস, বেগার প্রথা লোপ, সুদের হার কমানো, অরণ্যের অধিকার প্রতিষ্ঠা, পতিত জমি বণ্টন প্রভৃতি দাবি এই সংগঠনের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়।
পরিণতি
এই সমস্ত কারণ ও উদ্দেশ্য নিয়ে সারা ভারত কিষানসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। এর সভাপতি হন স্বামী সহজানন্দ সরস্বতী। ইন্দুলাল যাজ্ঞিক সম্পাদিত ‘কিষান বুলেটিন’ ছিল এর মুখপত্র। সংগঠনটি কংগ্রেসের সহযোগী হয়ে ওঠে এবং জাতীয় আন্দোলনের ক্ষেত্রেও অবদান রাখে।