কাশ্মীরের ইতিহাস সংক্ষেপে আলোচনা করো

কাশ্মীরের ইতিহাস সংক্ষেপে আলোচনা করো
কাশ্মীরের ইতিহাস সংক্ষেপে আলোচনা করো

ভূমিকা

প্রচলিত লোককথা অনুযায়ী কাশ্মীর কথাটির আক্ষরিক অর্থ শুষ্কভূমি। কলহনের লেখা ‘রাজতরঙ্গিনী’ নামক কাশ্মীরের ইতিহাস গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে, একসময় কাশ্মীরে কার্কোট নাগ বংশের রাজারা রাজত্ব করতেন।

কাশ্মীরের ব্রাহ্মণ বসতি

‘রাজতরঙ্গিনী’ অনুযায়ী একসময় কাশ্মীর উপত্যকায় ছিল প্রচুর হ্রদ। পুরাণ থেকে জানা যায়, কাশ্মীর এলাকায় একসময় ব্রাহ্মণেরা বাস করতেন। তবে পরবর্তীকালে এই অঞ্চলে বৌদ্ধ ও শৈব ধর্মের ব্যাপক প্রসার ঘটে।

কাশ্মীরে মধ্যযুগে মুসলিম শাসন

মধ্যযুগে কাশ্মীরে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে ইসলাম ধর্মেরও ব্যাপক প্রসার ঘটে। এসময় জম্মু ও লাদাখ অঞ্চল বাদ দিয়ে সমগ্র কাশ্মীর এলাকায় মুসলিমরাই ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। ১৩৪৯ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ শাহ মির কাশ্মীরে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করেন, যা অন্তত ৫০০ বছর স্থায়ি হয়েছিল।

মুঘল শাসন ও দুরানি আধিপত্য

১৫২৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৭৭১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কাশ্মীরে মুঘল আধিপত্য বজায় ছিল। এরপর উপজাতি দুরানি বংশের নেতাদের আধিপত্য এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়।

কাশ্মীরের পরিবর্তিত শাসনাধিকার

১৮২০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ পাঞ্জাবের শিখ ধর্মাবলম্বী মহারাজা রণজিৎ সিংহ দুরানি বংশের শাসনের অবসান ঘটিয়ে কাশ্মীর দখল করেন। অন্যদিকে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কাশ্মীর দখল করে এবং ১৮৪৬ খ্রিস্টাব্দে কাশ্মীরকে জম্বুর হিন্দুরাজা গুলাব সিং-এর কাছে বিক্রি করে দেয়। এর পরবর্তীকালে প্রায় এক শতাব্দী ও তার বেশিকাল ধরে কাশ্মীর শাসিত হতে থাকে হিন্দুরাজাদের দ্বারা। ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে কাশ্মীরের মহারাজা হন ইন্দর মহিন্দর হরি সিং বা হরি সিং।

গুরুত্বপূর্ণ দেশীয় রাজ্য

ঔপনিবেশিক শাসনকালে কাশ্মীর ব্রিটিশদের অনুগত থাকায় ব্রিটিশদের ভারত ত্যাগের সময়ে কাশ্মীর হয়ে ওঠে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দেশীয় রাজ্য।

পাকিস্তানের কাশ্মীর আক্রমণ

এই অবস্থায় ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ২২ অক্টোবর পাকিস্তানের মদতপুষ্ট হানাদার বাহিনী কাশ্মীরে প্রবেশ করে হত্যা, লুঠ ও নির্যাতন-সহ ব্যাপক হিংসাত্মক কার্যকলাপ শুরু করে। মহারাজা হরি সিং রাজধানী শ্রীনগর থেকে পালিয়ে এসে ২৪ অক্টোবর ভারত সরকারের কাছে সামরিক সাহায্য প্রার্থনা করেন। ভারত সরকার জানায় যে, মহারাজা ভারতভুক্তির দলিলে (Instrument of Accession) স্বাক্ষর করলে তবেই ভারত কাশ্মীরে সেনা পাঠাবে।

কাশ্মীরের ভারতভুক্তি

মহারাজা হরি সিং ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ২৬ অক্টোবর ভারতভুক্তির দলিলে স্বাক্ষর করলে কাশ্মীরের জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল কনফারেন্স তা সমর্থন করে। ৩১ অক্টোবর কাশ্মীরে ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা শেখ আবদুল্লার নেতৃত্বে আপৎকালীন শাসনব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়।

Leave a Comment