‘কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি’-র ফলে শস্য ও বাড়িঘরের কেমন অবস্থা হয়েছিল

'কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি'-র ফলে শস্য ও বাড়িঘরের কেমন অবস্থা হয়েছিল
‘কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি’-র ফলে শস্য ও বাড়িঘরের কেমন অবস্থা হয়েছিল?

ভূমিকা

কবিকঙ্কণ মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর ‘অম্বিকামঙ্গল’ তথা ‘চণ্ডীমঙ্গল’ কাব্যের ‘আখেটিক’ খণ্ড থেকে চয়ন করা ‘কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি’ কাব্যাংশটিতে দৈবাদেশে ঘনিয়ে ওঠা এক ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা আছে। কবিবর্ণিত এই পরিস্থিতি চিত্রে প্রকৃতির হঠাৎ পরিবর্তন, পরিবেশ পরিস্থিতির উপর দুর্যোগের করুণ অভিঘাত এমনভাবে চিত্রিত হয়েছে, যাতে কলিঙ্গের প্রজাসাধারণকে প্রবল এক ক্ষয়ক্ষতির সামনে এসে দাঁড়াতে হয়। কিন্তু কবির এই বর্ণনভঙ্গি যথেষ্ট বাস্তবিক বলে কেবল মানুষের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, চেনা জগতটির হালচালই কবি তুলে আনেননি উক্ত কাব্যাংশে, স্বাভাবিকভাবেই এসে গেছে ক্ষয়ক্ষতির এলাকায় প্রজাদের শস্যখেতের ক্ষয়ক্ষতির খতিয়ানও।

শস্য ও বাড়িঘরের পরিস্থিতি

কবি জানেন কলিঙ্গপ্রজাদের জীবনে কোন্ কোন্ বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। তাদের ব্যক্তি তথা সমাজজীবনে ঘরবাড়ির মতোই একান্ত প্রয়োজনের বিষয় হল শস্য, যা তাদের উদরপূর্তির ইন্ধন। কবি বর্ণনায় তাই অনিবার্যভাবে এসে যায় শস্যপ্রসঙ্গ –“ধূলে আচ্ছাদিত হইল যে ছিল হরিত।/উলটিয়া পড়ে শস্য প্রজা চমকিত।।” আবার অন্যত্র তিনি একই প্রসঙ্গে বলেন ‘আছুক শস্যের কার্য’, অর্থাৎ যে শস্য বর্তমান তা বিনষ্ট হল, ঝড়-জলে যেন মাঠের শস্য মাঠেই রয়ে গেল। কলিঙ্গের প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঘরবাড়ির অবস্থাও তথৈবচ, কেন-না ‘হেজ্যা গেল ঘর।’ ঘরগুলিরও শস্যের মতো বিনষ্টিপর্ব চলতে লাগল। ঘরের চাল বিদারণ করে শিলা ধেয়ে এসে ভাদ্রের তালের মতো পড়ছে মেঝেতে। তাই গৃহগুলি যেন তছনছ হয়ে যায়। মঠ-অট্টালিকা ভেঙে খান খান হয়ে যায় দুর্যোগের তাণ্ডবে। চতুর্দিকে যে পর্বতপ্রমাণ ঢেউ বয়ে চলে, তার মাথায় চড়ে ঘরগুলি যেন টলমল করতে থাকে।

Leave a Comment