কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি’ কাব্যাংশ অবলম্বনে প্রজাদের দুরবস্থার বর্ণনা দাও। |
প্রজাদের দুরবস্থা
মধ্যযুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাহিনি কাব্যকার কবিকঙ্কণ মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর ‘কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি’ কাব্যাংশে কলিঙ্গদেশের প্রজাকুলের দুরবস্থার নিদারুণ চিত্র অঙ্কিত হয়েছে। দৈবাদেশে কলিঙ্গের আকাশে হঠাৎ ঘনিয়ে ওঠা মেঘরাশি তীব্র অন্ধকার এমনভাবে সূচিত করেছিল যে, প্রজারা কেউ কারও অঙ্গ দেখতে পাচ্ছিল না। ঈশানে উড়ন্ত মেঘ ক্রমে সারা আকাশ ছেয়ে ফেলে যেন উত্তুরে বাতাসকে আহ্বান করেছিল। ফলে মেঘ কর্ষণে ঘন ঘন বিদ্যুতের ঝলক ও উচ্চনাদে মেঘগর্জন হচ্ছিল বলে প্রলয়ের আশঙ্কায় প্রজারা বিষাদক্লিষ্ট হয়ে পড়ে, ঝড়ের তাণ্ডবে ঘরবাড়ি ছেড়ে দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দেয়। ঝড়-বৃষ্টির দাপটে মাঠের শস্যের বিনষ্টিতে প্রজারা চমকিত হয়। সমগ্র পৃথিবী যেন জলমগ্ন হয়ে পড়ে, জলস্থল একাকার হয়ে যায়। তীব্র মেঘগর্জনে কেউ কারও কথা শুনতে পায় না। দিনরাতের পার্থক্য মুছে যায়। এমতাবস্থায় বজ্রপাতের ঘনঘটা দেখে কলিঙ্গবাসী বজ্র-নিবারক ঋষি জৈমিনিকে স্মরণ করে একাগ্রে। সূর্যের আলো প্রায় চোখে পড়ে না। গর্তবাসী সর্পকুল উঠে এসে জলে ভেসে বেড়ায়। মানুষের দুরবস্থার বর্ণনায় কবি বলেন- “নিরবধি সাত দিন বৃষ্টি নিরন্তর/আছুক শস্যের কার্য হেজ্যা গেল ঘর।” অর্থাৎ টানা সাতদিনের ঘোরতর বর্ষায় শস্যের যারপরনাই ক্ষতি তো হলই, সেইসঙ্গে ঘরবাড়িও বিনষ্ট হয়ে গেল। সবচেয়ে করুণ যে দুরবস্থাচিত্র অঙ্কিত হয়েছে, তা হল ঘরের চাল ভেদ করে আকাশনির্গত শিলা মেঝেতে ভাদ্রের তালের মতো এসে পড়ে। ঝড়-বৃষ্টি যেন কলিঙ্গের প্রজাসাধারণের জীবনকে প্রলয়ের মাতনে জেরবার করে দেয়।