ঔপনিবেশিক শাসনকালে ভারতের দলিত আন্দোলন সংগঠিত করার ক্ষেত্রে জ্যোতিরাও ফুলে-র অবদান কী ছিল? |
ভূমিকা
ঔপনিবেশিক শাসনকালে ভারতের দলিত আন্দোলন সংগঠিত করার ক্ষেত্রে মহারাষ্ট্রের পিছিয়ে পড়া ও নিপীড়িত মানুষের নেতা জ্যোতিরাও ফুলে (১৮২৭-১৮৯০ খ্রিস্টাব্দ)-র অবদান ছিল অনস্বীকার্য।
যুক্তিবাদী সংস্কার
জ্যোতিরাও ফুলে সমাজের নিম্নশ্রেণির মানুষের উন্নতি এবং তাদের মধ্যে আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটানোর জন্য আজীবন প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। তিনি যুক্তিগ্রাহ্য প্রতিবাদ ও বক্তব্য দ্বারা মানুষের সামাজিক সমস্যা ও কুসংস্কারগুলি দূর করতে চেয়েছিলেন।
সমাজসংস্কার
মহারাষ্ট্রের সমাজজীবনে প্রচলিত জাতিভেদ প্রথা, অস্পৃশ্যতা, কুসংস্কার, বহুবিবাহ, নারীদের দুর্দশার বিরুদ্ধে তিনি সস্ত্রীক (সাবিত্রী বাঈ) জেহাদ ঘোষণা করেন। দলিত ও পিছিয়ে পড়া শ্রেণির জন্য সামাজিক ন্যায়প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জ্যোতিরাও ফুলে ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে সত্যশোধক সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন।
ব্রাহ্মণ্য শ্রেণির বিরোধিতা
মহারাষ্ট্রের সমাজজীবনে ব্রাহ্মণ্য শ্রেণির একচেটিয়া আধিপত্যের তিনি তীব্র বিরোধিতা করেন। ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে জ্যোতিরাও ফুলে কুনবি, মালি, মাঙ, মাহার প্রভৃতি নিম্নবর্ণের মানুষদের নিয়ে ব্রাহ্মণবিরোধী অভিযান শুরু করেন। তিনি মনে করতেন, শূদ্রদের সামাজিক দাসত্ব বজায় রাখার জন্য ব্রাহ্মণ্য শাস্ত্রগ্রন্যগুলি রচিত এবং হিন্দুধর্মের ইতিহাস হল শূদ্রদের উপর ব্রাহ্মণদের অত্যাচারের ইতিহাস। তিনি ব্রাহ্মণ্যবাদের তীব্র বিরোধিতা করে গুলামগিরি (১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দ), ব্রাহ্মণচে কসাব (পুরোহিততন্ত্রের স্বরূপ), শ্বেতকার্যচ অসুদ (কৃষকদের চাবুক) প্রভৃতি গ্রন্থ রচনার মধ্য দিয়ে নিম্নবর্ণের মানুষের মধ্যে ব্রাহ্মণ্যবিরোধী আন্দোলনের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করেন।
নিম্নবর্ণের উন্নতি
জ্যোতিরাও ফুলে প্রতিষ্ঠিত সত্যশোধক সমাজ নিম্নবর্ণ ও সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নতির উদ্দেশ্যে আন্দোলন চালিয়ে যায়। এই সমাজ কর্তৃক প্রকাশিত প্রথম রিপোর্টে বলা হয় যে, ব্রাহ্মণদের দাসত্ব থেকে শূদ্রদের সুরক্ষিত করার উদ্দেশ্যেই এই সংগঠন গড়ে উঠেছে।
মূল্যায়ন
মহারাষ্ট্র তথা দক্ষিণ ভারতের নিম্নবর্ণের মানুষদের সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে জ্যোতিরাও ফুলে অসামান্য অবদানের সাক্ষ্য রাখেন। ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি ‘মহাত্মা’ উপাধিতে ভূষিত হন।