একা আন্দোলনের পরিচয় দাও |
ভূমিকা
অসহযোগ-খিলাফৎ আন্দোলনের সময় উত্তরপ্রদেশে (তখনকার যুক্তপ্রদেশ) একটি কৃষক আন্দোলন গড়ে ওঠে, যা একতা বা একা আন্দোলন নামে পরিচিত। সমাজের নিম্নবর্গের কৃষকরা এই আন্দোলন সংগঠিত করে। এই আন্দোলনের নেতা ছিলেন মাদারি পাসি। আন্দোলনের চরিত্র উগ্র প্রকৃতির ছিল। সেইজন্য সরকারি দমননীতির কোপে পড়ে আন্দোলন ব্যর্থ হয়।
একা আন্দোলনের কারণ
এই আন্দোলনের কারণ ছিল-
[1] নির্ধারিত খাজনার চেয়ে ৫০ শতাংশ অতিরিক্ত খাজনা নির্ধারণ।
[2 ] খাজনা আদায়কারীদের নিপীড়ন।
[3] বাটাই বা উৎপন্ন শস্যের বদলে নগদ অর্থে করদান।
[4] তালুকদারদের অত্যাচার প্রভৃতি।
একা আন্দোলনের প্রসার
এই সময় অসহযোগ ও খিলাফৎ আন্দোলন শুরু হয়। এই সুযোগে একা আন্দোলন কংগ্রেসের সমর্থন লাভ করে। হরদই, সীতাপুর, বরাইচ জেলায় আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।
শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান
একা আন্দোলন পরিচালনার সময় আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা মাঝে মাঝে সভা করত। এই সভায় ধর্মীয় আচার-আচরণ ও রীতিনীতি পালন করা হত। একজন পুরোহিত সভায় পৌরোহিত্য করতেন এবং উপস্থিত কৃষকেরা শপথ নিত–
[1] তারা কেবল সরকার নির্ধারিত খাজনা দেবে, অতিরিক্ত খাজনা দেবে না।
[2] জমিদার জমি থেকে কৃষকদের উচ্ছেদ করলেও কৃষক জমি ছাড়বে না।
[3] কৃষকেরা জমিদারদের বেগার শ্রম দেবে না।
[4] পঞ্চায়েতের সিদ্ধান্ত মেনে চলবে ইত্যাদি।
একা আন্দোলনের কার্যকলাপ
একা আন্দোলনের নেতারা নিজস্ব পথে চলেন। তারা জাতীয় আন্দোলনের নেতাদের পরামর্শ বা নিয়ম মানেননি। মাদারি পাসি জেলাশাসককে হত্যা এবং ইংরেজ শাসকদের বিতাড়িত করার ডাক দেন। ফলে কৃষকেরা দল বেঁধে স্থানীয় জমিদারদের বাড়ি আক্রমণ করে। তারা ইংরেজদেরও আক্রমণ করে। কুমায়ুন অঞ্চলের সংরক্ষিত বনভূমিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। খাজনা দেওয়া বন্ধ করে দেয়।
পরিণতি
একা আন্দোলন উগ্র হয়ে উঠলে সরকার তা দমন করতে অগ্রসর হয়। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে সরকারের নির্মম দমননীতির সাহায্যে মাদারি পাসির একা আন্দোলনের অবসান ঘটে।