উনিশ শতকে ভারতে কয়েকটি রাজনৈতিক সভাসমিতির বিবরণ দাও। |
ভূমিকা
ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ও পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা প্রবর্তনের ফলে একটি শিক্ষিত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি গড়ে ওঠে। এই শ্রেণি রাজনৈতিকভাবে সচেতন ছিল। তাদের উদ্যোগে শ্রেণিস্বার্থ রক্ষায় বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়।
সভাসমিতিসমূহ
উনিশ শতকের ভারতে সমস্ত দিক থেকে অগ্রণী ছিল বাংলা। এই সময় বাংলা প্রদেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক সমিতি গড়ে ওঠে।
বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা
ইংল্যান্ডের অনুকরণে এদেশে প্রথম যে-সমস্ত রাজনৈতিক সমিতি গড়ে ওঠে, তার মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য ছিল বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা। ১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দের ৮ ডিসেম্বর এই সভা প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন কালীনাথ রায়চৌধুরী, প্রসন্নকুমার ঠাকুর, প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর প্রমুখ। জমিদার শ্রেণির স্বার্থরক্ষা ছিল এই সমিতির উদ্দেশ্য।
জমিদার সভা
১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দে প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর, প্রসন্নকুমার ঠাকুর ও রাজা রাধাকান্ত দেব এই সভা প্রতিষ্ঠা করেন। জমিদারদের স্বার্থরক্ষা এই সমিতির উদ্দেশ্য ছিল।
ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি
পাদরি অ্যাডাম এই সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন (১৮৩৯ খ্রি.)। ভারতীয়দের প্রকৃত অবস্থা ব্রিটিশ জনগণকে জানানো এই সমিতির উদ্দেশ্য ছিল। এজন্য অ্যাডাম ‘ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাডভোকেট’ নামে একটি পত্রিকাও প্রকাশ করেন।
বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি
ইংল্যান্ডের রাজনৈতিক নেতা টমসন-এর উদ্যোগে এই সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে। এই সমিতির সভাপতি ছিলেন টমসন ও সম্পাদক ছিলেন প্যারীচাঁদ মিত্র। ভারতবাসীর জন্য ইংল্যান্ড থেকে সুযোগসুবিধা আদায় করাই ছিল এই সমিতির উদ্দেশ্য।
ব্রিটিশ ইন্ডিয়া অ্যাসোসিয়েশন
জমিদার সমিতি ও বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি একত্রিত হয়ে এই সমিতি গড়ে ওঠে (১৮৫১ খ্রি.)। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পাদক ও রাজা রাধাকান্ত দেব এর সভাপতি ছিলেন। বোম্বাই এবং মাদ্রাজে এই সমিতির শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়। হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকা এই সমিতির মুখপত্র ছিল।
অন্যান্য
এ ছাড়া ইন্ডিয়ান লিগ (১৮৭৫ খ্রি.), ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন (১৮৭৬ খ্রি.) নামে দুটি সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে।
মূল্যায়ন
ইংরেজ শাসন ও তার ফলশ্রুতি হিসেবে এই সভাসমিতিগুলি গড়ে ওঠে। যদিও ইংরেজ শাসনের প্রতি আনুগত্য বজায় ছিল, তথাপি ধূমায়িত ক্ষোভ এই সকল সমিতি প্রতিষ্ঠার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ছিল। এই সমিতিগুলিকে কেন্দ্র করেই জাতীয় আন্দোলনের পথ তৈরি হয়। তাই ড. অনিল শীল বলেছেন, এই সমিতিগুলি উনিশ শতকের ভারতকে আধুনিক রাজনীতির প্রাঙ্গণে এনেছিল।