উনবিংশ শতকে কলকাতায় দেশীয় উদ্যোগে স্থাপিত কয়েকটি বিখ্যাত ছাপাখানার বিবরণ দাও। |
ভূমিকা
ঊনবিংশ শতকে কলকাতায় দেশীয় উদ্যোগে বিভিন্ন বিখ্যাত ছাপাখানা গড়ে উঠেছিল।
বাঙ্গাল গেজেটি প্রেস
১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য ও হরচন্দ্র রায়ের যৌথ উদ্যোগে স্থাপিত হয় ‘বাঙ্গাল গেজেটি প্রেস’। এই প্রেস থেকে প্রকাশিত হয় বৈকুণ্ঠনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ভগবদ্গীতা’।
সংস্কৃত যন্ত্র
ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের সহযোগিতায় সংস্কৃত ছাপাখানার শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছিল। রামমোহন রায়ের ‘শারীরিক মীমাংসা’, রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশের ‘জ্যোতিষ সংগ্রহসার’ ইত্যাদি বই এই প্রেস থেকে ছাপা হয়।
বিশ্বনাথ দেবের ছাপাখানা
শোভাবাজারের বিশ্বনাথ দেবের ছাপাখানা ছিল সেই সময়ে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। রাধাকান্ত দেবের ‘বেঙ্গলি স্পেলিং বুক’, রামকমল সেনের ‘নীতিকথা’, দুর্গাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ‘গঙ্গাভক্তি তরঙ্গিনী’ প্রভৃতি বই এই প্রেসে ছাপা হয়।
সমাচার চন্দ্রিকা যন্ত্র
ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সমাচারচন্দ্রিকা যন্ত্র’ কলুটোলায় স্থাপিত হয়। এখান থেকে কাশীনাথ তর্ক পঞ্চাননের ‘পাষণ্ড পীড়ন’, ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘দূতীবিলাস’ প্রভৃতি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়।
সংবাদ তিমিরনাশক ছাপাখানা
কলকাতার মির্জাপুরে অবস্থিত সংবাদ তিমিরনাশক ছাপাখানা থেকে অনেক বই প্রকাশিত ৮ হয়। তৎকালীন সময়ের বিখ্যাত প্রেস হিসেবে এই ছাপাখানার নাম ছিল। শ্রীকৃম্নমোহন দাসের ‘জ্যোতিষ’ ও ‘দিনকৌমুদী’ এই ছাপাখানা থেকে প্রকাশিত হয়।
সিন্ধুযন্ত্র
শিয়ালদহের ‘সিন্ধুযন্ত্র’ বা পীতাম্বর সেনের ‘যন্ত্রালয়’ ছিল তৎকালীন সময়ের বিখ্যাত একটি ছাপাখানা। এখান থেকে প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে রামচন্দ্র তর্কালঙ্কারের ‘কৌতুকসর্বস্ব’ নাটক বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
উপেন্দ্রলাল যন্ত্র
বহুবাজারের লেবুতলা লেনের বিখ্যাত প্রেস ছিল উপেন্দ্রলাল যন্ত্র। এখান থেকে ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিখ্যাত বই ‘নববিবিবিলাস’ ছাপা হয়।
সারসুধানিধি প্রেস
বড়োবাজারের এই প্রেস থেকে অনেক বাংলা ও হিন্দি বই ছাপা হয়।
উপসংহার
ঊনবিংশ শতকে উপরোক্ত ছাপাখানাগুলি বাংলার মুদ্রণের জগতে এক নতুন গতি এনে দেয়, যা বাংলার সমাজজীবনে এক অভূতপূর্ব আলোড়ন সৃষ্টি করে।