|
উদ্বাস্তু পুনর্বাসন সমস্যা পাঞ্জাবের তুলনায় বাংলায় বেশি অনুভূত হয় কেন? |
ভূমিকা
ভারতের স্বাধীনতার সঙ্গে দেশভাগের ঘটনা জড়িত। দেশভাগের অংশ ছিল পাঞ্জাব ও বাংলা ভাগ। এই ভাগাভাগির ফলে উদ্বাস্তু সমস্যার সৃষ্টি হয় এবং তার সঙ্গে আসে পুনর্বাসন সমস্যা। উদ্বাস্তু পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে পাঞ্জাবের তুলনায় বাংলার সমস্যা বেশি ছিল।
উদ্বাস্তু পুনর্বাসন সমস্যা- পাঞ্জাব ও বাংলা
সংখ্যা
উদ্বাস্তু পুনর্বাসন সমস্যার ক্ষেত্রে উদ্বাস্তু সংখ্যা একটি বড়ো সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। পাঞ্জাব ভাগের ফলে পশ্চিম পাঞ্জাব থেকে প্রায় ৪৫ লক্ষ উদ্বাস্তু ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করে। এই নির্দিষ্ট সংখ্যক উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের জন্য বিভিন্ন সরকারি উদ্যোগ নেওয়া হয়।
অন্যদিকে পূর্ব বাংলা (পাকিস্তান) থেকে পশ্চিমবাংলায় অনেক বেশি উদ্বাস্তু এসেছিল। ১৯৪৭-১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ সময়কালে প্রায় ৫১ লক্ষ, ১৯৬০-৬১ খ্রিস্টাব্দে প্রায় ১০ লক্ষ, ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে প্রায় ১০ লক্ষ এবং ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে প্রায় ২৫ লক্ষ উদ্বাস্তু ভারতে আশ্রয় নেয়। বেসরকারিভাবে আরও অনেক উদ্বাস্তু এসেছিল, যার মোট সংখ্যা ছিল ১ কোটি প্রায়। এই সংখ্যার বেশিরভাগ পশ্চিমবাংলায় আশ্রয় নেয়। এই বিপুল সংখ্যক উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন সরকারি উদ্যোগে সম্ভব হয়নি।
ধারাবাহিকতা
উদ্বাস্তু পুনর্বাসন সমস্যা বাংলায় বেশি অনুভূত [2 হওয়ার অপর একটি কারণ ছিল উদ্বাস্তুদের ধারাবাহিকভাবে আগমন। দেশভাগের পর পাঞ্জাবে ২ বছরের মধ্যে উদ্বাস্তুদের আসা শেষ হয়। পশ্চিম পাকিস্তানে আর কোনো দাঙ্গা না ঘটায় নতুন করে কেউ উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে আসেনি। অন্যদিকে পূর্ব পাকিস্তান থেকে ১৯৪৭-৭১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালে এবং তার পরেও ধারাবাহিকভাবে উদ্বাস্তু স্রোত পশ্চিমবাংলায় প্রবেশ করে।
জমি-বাড়ি
পাঞ্জাব ভাগের পর পূর্ব পাঞ্জাবের ৬০ লক্ষ মুসলিম তাদের ৪,৭০,০০০ একর কৃষিজমি ও বাড়ি ফেলে পশ্চিম পাকিস্তানে আশ্রয় নেয়। একইভাবে পশ্চিম পাঞ্জাবের ৪৫ লক্ষ হিন্দু ও শিখ তাদের ৬,৭০,০০০ একর জমি ও বাড়ি ফেলে ভারতে আশ্রয় নেয়। এর ফলে প্রত্যেক উদ্বাস্তু পরিবার কৃষিজমি (১০ একর) ও বাড়ি পায়।
অন্যদিকে পশ্চিমবাংলা থেকে কমসংখ্যক মুসলিম পূর্ব পাকিস্তানে আশ্রয় নিয়েছিল। তাদের জমি ও বাড়ি ফেলে যাওয়ার সংখ্যা আরও কম ছিল। পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসা বিপুল সংখ্যক উদ্বাস্তুদের তাই আশ্রয় ও কর্মসংস্থানের প্রবল সমস্যা হয়।
সরকারি উদ্যোগ
ভারত সরকারের উদ্যোগে যে ‘ত্রাণ ও পুনর্বাসন’ কার্যক্রম গৃহীত হয়, সেক্ষেত্রে পাঞ্জাব বেশি গুরুত্ব পায়। ১৯৪৭-৫২ খ্রিস্টাব্দ সময়কালে সরকারি উদ্যোগে আবাসন প্রকল্প, কলোনি, শহর (ফরিদাবাদ), ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প, ব্যাবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে উদ্বাস্তু পুনর্বাসন করা হয়।
অন্যদিকে সীমিত, ত্রাণনির্ভর ভারত সরকারের উদ্যোগ উদ্বাস্তুদের হতাশ ও ক্ষুব্ধ করে। পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী ডা. বিধানচন্দ্র রায়-এর উদ্যোগে আবাসন, শহর (কল্যাণী, দুর্গাপুর) কলোনি, শিল্পাঞ্চলে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়। সরকারি ঋণদানের ব্যবস্থাও করা হয়। কিন্তু এই ব্যবস্থা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় সীমিত।
মন্তব্য
এই সমস্ত কারণে পাঞ্জাবের তুলনায় বাংলায় উদ্বাস্তু পুনর্বাসন সমস্যা বেশি অনুভূত হয়।