‘আমরা’ কবিতার মর্মবস্তু আলোচনা করো |
ভূমিকা
স্বদেশের প্রতি অসীম শ্রদ্ধা ও অনুরাগ কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের সাহিত্যরচনার এক বিশেষ দিক। কখনও পৌরাণিক, কখনও ঐতিহাসিক, কখনও প্রাকৃতিক দৃশ্য বর্ণনায় আবার কখনও এদের সম্মিলনে স্বদেশের দুঃখদুর্দশা, আশা- আকাঙ্ক্ষা ইত্যাদির প্রকাশ ঘটিয়েছেন কবি। পাঠ্য ‘আমরা’ কবিতাটিও এমনই এক স্বদেশপ্রেমমূলক বা দেশাত্মবোধক কবিতা। এ কবিতায় তিনি বঙ্গবাসী ও বঙ্গদেশের চরিত্রমাহাত্ম্যের কীর্তন করেছেন।
বাঙালির সর্বজনীনতা
বাঙালির অতীত ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাহিত্য, স্থাপত্য, বিজ্ঞান, মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্তগুলি উল্লেখ করে কবি এ কবিতায় বাঙালির সর্বজনীনতার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। মাতৃভূমি কবির বর্ণনাগুণে–
‘সাগর যাহার বন্দনা রচে শত তরঙ্গ ভঙ্গে,-
আমরা বাঙালি বাস করি সেই বাঞ্ছিত ভূমি বঙ্গে।’
মহত্তম বাঙালি
বাঙালি এক সুপ্রাচীন ঐতিহ্যসম্পন্ন জাতি। বহু মিশ্রণ-বিমিশ্রণ সত্ত্বেও সে তার বৈশিষ্ট্য হারায়নি। কবি বাঙালির গৌরবগাথা প্রচারে তাই বাঙালিকে গুণে-ধর্মে-কর্মে-কীর্তিতে মহত্তম বলে উল্লেখ করেছেন।
বাঙালির ভবিষ্যৎ
এ বঙ্গের মাঙ্গল্যে বাঙালি বেতালের প্রশ্ন সমাধান করে শ্মশানের বুকে পঞ্চবটী রোপণ করেছে। বাঙালির মহামিলনমন্ত্রে জগৎপ্রাণের হাটে সাড়া মিলেছে। সমস্ত কবিতায় বাঙালির অতীত গৌরব ও বর্তমান সমৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে শেষপর্বে কবি বলেছেন আশাময় উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা। প্রত্যয়ী উচ্চারণ করেছেন—
‘বিধাতার বরে ভরিবে ভুবন বাঙালির গৌরবে।’
এভাবে বাঙালি ও মাতৃভূমি বাংলাদেশের জয়গানে মুখরিত এ কবিতাকে তাই স্বাভাবিকভাবেই দেশাত্মবোধক কবিতা বলা চলে।