‘আবহমান’ কবিতায় পল্লিবাংলার সাধারণ মানুষের চাওয়া-পাওয়ার যে আভাস আছে তা উল্লেখ করো

'আবহমান' কবিতায় পল্লিবাংলার সাধারণ মানুষের চাওয়া-পাওয়ার যে আভাস আছে তা উল্লেখ করো
‘আবহমান’ কবিতায় পল্লিবাংলার সাধারণ মানুষের চাওয়া-পাওয়ার যে আভাস আছে তা উল্লেখ করো।

গ্রামবাংলায় ফিরে আসার অমোঘ টান

কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর লেখা ‘আবহমান’ কবিতায় বঙ্গপ্রকৃতির পটভূমিতে আভাসিত হয়েছে পল্লিবাংলার সাধারণ মানুষের চাওয়া-পাওয়ার কথা। বহুকাল ধরে কত মানুষ এই বাংলার নিসর্গ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে এখানে ঘর বেঁধেছে ‘নিবিড় অনুরাগে’। এই বাংলার মাটি-হাওয়া যে ভালোবাসার বাতাবরণ রচনা করেছে, তার সঙ্গে মানুষ এমন নিবিড় সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে যে, সে ‘হারিয়ে গিয়েও আবার ফিরে আসে’ বাংলার গ্রামজীবনে। তার এই ফিরে আসার চাহিদা যুগ যুগ ধরে ফুরোয় না।

বাংলাদেশের সৌন্দর্যপিপাসু মানুষের চাওয়া-পাওয়ার হিসেব কবি মিলিয়ে দিয়েছেন আলোচ্য কবিতায়। বাঙালির অন্তর্গত ইচ্ছের পরিতৃপ্তি ঘটে এই বাংলার প্রকৃতির সান্নিধ্যে। কবি লিখেছেন বঙ্গজন–

“সারাটা দিন আপন মনে ঘাসের গন্ধ মাখে,

সারাটা রাত তারায় তারায় স্বপ্ন এঁকে রাখে।”

ফিরে আসার না ফুরোনো গল্প

অর্থাৎ সে যখন মাটির তথা বাস্তবের কাছাকাছি থাকে তখন সে প্রকৃতির সাহচর্যে বাঁচতে চায়, আবার যখন স্বপ্নের আকাশ খুঁজতে চায় তখনও প্রকৃতির কাছেই সে প্রশ্রয় খোঁজে। দিনের আলোয় ঘাসের গন্ধ মাখতে কিংবা রাতের তারায় স্বপ্ন এঁকে রাখতে এই বাংলার প্রকৃতিই তাকে হাতছানি দেয়। সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখ, যন্ত্রণা-উন্মাদনা সবই নিখুঁতভাবে ধরা থাকে বঙ্গপ্রকৃতির চালচিত্রে। সূর্যের আলো-ছায়া, নদীর বহমানতা যেমন চিরকালের, গ্রামবাংলার মানুষের যাবতীয় প্রত্যাশার আনন্দপূর্ণ প্রাপ্তি তেমনই ঘটে আসছে প্রকৃতিলগ্নতা থেকে। তাই বারবার তাকে ফিরে আসতে হয় গ্রামবাংলায়। তার ফিরে আসার গল্প ফুরোয় না বলে নটেগাছটি না মুড়িয়ে বুড়িয়ে ওঠে।

Leave a Comment