আবহবিকারের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলির বর্ণনা দাও

আবহবিকারের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলির বর্ণনা দাও
আবহবিকারের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলির বর্ণনা দাও
আবহবিকারের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হল—

• রোগালিথ: 

আবহবিকারের ফলে শিলাস্তর চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে ভূপৃষ্ঠের ওপর যে আলগা আবরণের সৃষ্টি করে তাকে রেগোলিথ বলে।

• স্যাপ্রোলহিট: 

আবহবিকারের ফলে বিয়োজিত শিলা যখন স্থানান্তরিত না হয়ে নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করে তখন তাকে স্যাপ্রোলাইট বলে।

• মরুভার্নিস : 

মরু অঞ্চলে কোয়ার্টজ কণা শিলাখণ্ড বা বোল্ডারের ওপর লোহা ও ম্যাঙ্গানিজ অক্সাইডের যে কমলা-বাদামি চকচকে আস্তরণ পড়ে তাকে মরুভার্নিস বলে।

• টর বা ক্যাসল কাপিজ: 

সাধারণত অন্তঃস্থ কঠিন শিলার চারপাশের দারণযুক্ত অংশ আবহবিকারের ফলে ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। এই ভঙ্গুর অংশ পরবর্তীকালে অপসারিত হলে অন্তঃস্থ কঠিন শিলাটি অনুচ্চ টিলার ন্যায় দাঁড়িয়ে থাকে। একে টর বলে।

• ইলাসলবার্জ বা বোর্নস্থার্ডট: 

কয়েকশো ফুট গভীর পর্যন্ত বিস্তৃত আবহবিকার এবং ধীরে ধীরে আবহবিকারজাত পদার্থের অপসারণের ফলে যে গম্বুজাকৃতির পাহাড় বা টিলা বেরিয়ে আসে তাকে ইনসেলবার্জ বা বোর্নহার্ডট বলে।

• চাপ হ্রাসজনিত গম্বুজ : 

আগ্নেয় শিলায় গঠিত উদবেধ বহুকাল ধরে ক্ষয়কার্যের ফলে ভূপৃষ্ঠে আত্মপ্রকাশ করলে ওপরের চাপ হ্রাসের জন্য তা প্রসারিত হয়ে ধনুকের মতো বেঁকে গম্বুজে পরিণত হয়। একে চাপ হ্রাসজনিত গম্বুজ বলে।

• কেন্সপ্রাঙ :

প্রসারণজনিত আবহবিকারের ফলে বিশালাকার বোল্ডারগুলিতে এমন কিছু ফাটল সৃষ্টি হয়, যেগুলি থেকে বোল্ডারটি কম সংখ্যক বড়ো বড়ো খণ্ডে ভেঙে যায়। এই ফাটলগুলিকে কেন্সপ্রাঙ বলে।

• স্ক্রি বা ট্যালাস : 

শীতপ্রধান পার্বত্য অঞ্চলে যান্ত্রিক আবহবিকারের মাধ্যমে শিলাস্তর ফেটে টুকরো টুকরো অসংখ্য কোণবিশিষ্ট প্রস্তরখণ্ডের সৃষ্টি করে। এই কোণবিশিষ্ট প্রস্তরখণ্ডগুলি উল্লম্বভাবে পর্বতগাত্রে অবস্থান করলে তাকে স্ক্রি বা ট্যালাস বলে।

• গামাগর্ভ: 

সাধারণত গ্রানাইট, নিস বা বেলেপাথর জাতীয় শিলায় ক্ষুদ্রকণা বিসরণ বা ফ্লেকিং-এর কারণে গর্তের সৃষ্টি হয়। এই গর্তগুলিকে আবহবিকার গর্ত বা গামাগর্ত বলে।

• আবহবিকার গুহা: 

স্থানীয় অঞ্চল জুড়ে ফ্লেকিং এবং ক্ষুদ্রকণা বিসরণ ইত্যাদি কারণে বৃহদায়তন গুহার সৃষ্টি হয়। এগুলিকে আবহবিকার গুহা বা নিশে বলে।

• হালিকল্প: 

আবহবিকারের ফলে সৃষ্ট বেলেপাথরের ফাটলগুলি আয়রন অক্সাইডের দ্বারা ভরাট হলে তাকে হানিকম্ব বলে।

• কার্স্ট ভূমিরূপ: 

চুনাপাথর যুক্ত অঞ্চলে কার্বনেশন ও দ্রবণ প্রক্রিয়ায় সিঙ্ক হোল, সোয়ালো হোেল, ডোেলাইন, ওভালা, পোলজি, গুহা, স্ট্যালাকটাইট, স্ট্যালাগমাইট, গ্রাইকস প্রভৃতি ভূমিরূপ সৃষ্টি ম হয়। এদের একত্রে কার্স্ট ভূমিরূপ বলে।

• গোলাকৃতি বোল্ডার: 

কোনো বোল্ডার বা প্রস্তরখণ্ডের তীক্ষ্ণ কোণগুলিতে বিভিন্ন দিক থেকে আবহবিকার পদ্ধতি কার্যকর হয়। কিন্তু বোল্ডারের পাশগুলিতে একদিক থেকে আবহবিকার পদ্ধতি কার্যকরী হয়। এর ফলে গোলাকৃতি বোল্ডার সৃষ্টি হয়।

• রুওয়ার (Ruware) : 

যান্ত্রিক আবহবিকারের দ্বারা গম্বুজাকৃতি ভূমিরূপ ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং অভ্যন্তরস্থ শিলা ভূপৃষ্ঠে উন্মোচিত টিলারূপে অবস্থান করে। একে রুওয়ার বলে।

• ড্যুরিক্সাস্ট: 

আর্দ্র অঞ্চলে রাসায়নিক আবহবিকারের ফলে বিয়োজিত অদ্রবণীয় পদার্থ মৃত্তিকার স্তরে জমা হয়ে কঠিন আবরণ সৃষ্টি করে। একে ড্যুরিক্রাস্ট বলে।

• ইচ্ প্লেন (Etch Plain) : 

ভূ-তাত্ত্বিক E.J.Wayland সর্বপ্রথম ইচ্ প্লেন (Etch plain) বা চাঁচন তল কথাটি ব্যবহার করেন। রেগোলিথের আস্তরণ যুক্ত ভূপৃষ্ঠে রেগোলিথ অপসৃত হলে তা পুনরায় আবহবিকারপ্রাপ্ত হয় এবং রেগোলিথে পরিণত হয়। পরে আবার ওই স্থান থেকে রেগোলিথ অপসৃত হলে নীচের কঠিন শিলা উন্মুক্ত হয়। এই ভাবে উন্মোচিত তলটির উপর পুনরায় আবহবিকার কার্যকরী হয় ও ওই তলের উপর রেগোলিথ সৃষ্টি হয়। সেই রেগোলিথ আবার অপসারিত হয়। ক্রমান্বয়ে এই প্রক্রিয়া চলতে থাকলে প্রতি বার অপসারণের ফলে বিভিন্ন তলদেশে সৃষ্ট সমতল ভূমিকে ইচ্ প্লেন বলে।

Leave a Comment