আবহবিকারের ফলে কীভাবে মৃত্তিকা সৃষ্টি হয় |
মৃত্তিকার উৎপত্তিতে আবহবিকারের গুরুত্ব সর্বাধিক। বিভিন্ন যান্ত্রিক ও রাসায়নিক আবহবিকার প্রক্রিয়ার ফলে শিলা চূর্ণবিচূর্ণ ও বিয়োজিত হয়ে ছোটো ছোটো কণায় পরিণত হয়। এই চূর্ণবিচূর্ণ পদার্থগুলি ভূপৃষ্ঠের উপর এক শিথিল ও কোমল আবরণ গড়ে তোলে। একে রেগোলিথ বলে। এই রেগোলিথই হল মাটি সৃষ্টির মূল উপকরণ বা কাঁচামাল। অর্থাৎ, মাটি গঠনের প্রথম পর্যায় হল রেগোলিথ সৃষ্টি, যা সম্পূর্ণ আবহবিকারের উপর নির্ভরশীল। পরবর্তী পর্যায়ে রেগোলিথের সঙ্গে আণুবীক্ষণিক জীবকুল, মৃত উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহাবশেষ পচনক্রিয়ার সাহায্যে মিশে গিয়ে হিউমিফিকেশন প্রক্রিয়ায় হিউমাস সৃষ্টি হয়। এরপর, জৈবরাসায়নিক পদ্ধতিতে হিউমাস পুনরায় বিয়োজিত হয়ে বিভিন্ন খনিজের আবির্ভাব ঘটে। একে খনিজকরণ বলে। মাটি গঠনকারী প্রক্রিয়া চলার সময় এলুভিয়েশন পদ্ধতিতে বিভিন্ন খনিজ মাটির নীচে প্রবেশ করতে থাকে এবং ইলুভিয়েশন পদ্ধতিতে মাটির নীচের স্তরে সেগুলি জমতে থাকে। এইভাবে আবহবিকার ও মৃত্তিকাগঠনকারী প্রক্রিয়ার মিলিত ক্রিয়াকলাপে মৃত্তিকা গঠিত হয়। বিভিন্ন আবহবিকার প্রক্রিয়া বিভিন্ন ধরনের মৃত্তিকার উৎপত্তির সূচনা করে। যেমন (i) চুনাপাথর অঙ্গারযোজনের মাধ্যমে চুন সমৃদ্ধ চারনোজেম মাটির সৃষ্টি হয়। (ii) জারণ প্রক্রিয়া ল্যাটেরাইট মাটি সৃষ্টিতে সাহায্য করে।
মৃত্তিকা বিজ্ঞানী মোর (More) 1969 খ্রিস্টাব্দে মৃত্তিকার উৎপত্তি ও আবহবিকারের সম্পর্কের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে পাঁচটি পর্যায় উল্লেখ করেছেন। যথা –
• প্রারম্ভিক পর্যায়: অপরিবর্তিত জনকশিলা বা আদিশিলা।
• তরুণ পর্যায়: আবহবিকারের শুরু।
• যৌবন পর্যায়: পরিবর্তনযোগ্য খনিজের বিয়োজন ও কর্দম কণার পরিমাণ বৃদ্ধি।
• বার্ধক্য পর্যায়: অত্যন্ত প্রতিরোধকারী খনিজ ছাড়া সব খনিজের বিয়োজন।
• অন্তিম পর্যায়: মৃত্তিকা গঠন প্রক্রিয়ার সমাপ্তি।