‘আকাশে সাতটি তারা যখন উঠেছে ফুটে’- এরপর কবি কোন কোন দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেন এবং তা কবির মনে কীরূপ অনুভূতির জন্ম দেয়? |
কবির অনুভূতি
‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় কবি জীবনানন্দ সন্ধ্যার আকাশে সাতটি তারা ফুটে উঠলে ঘাসের উপর বসে প্রত্যক্ষ করেন বঙ্গপ্রকৃতির নানান দৃশ্য, যা কবির মনে জন্ম দেয় এক পরিপূর্ণতার বোধ। আর সেজন্যই বোধহয় তিনি আমৃত্যু খুঁজতে যাননি পৃথিবীর রূপ। সন্ধ্যার সূচনায় কবি দেখেছেন গঙ্গাসাগরের ঢেউয়ে অস্তমিত সূর্যের আলোয় ভাসমান মেঘ কামরাঙা-লাল বর্ণ ধরেছে। কবির এই মেঘ দেখে প্রাণচঞ্চল মনিয়া পাখির মৃতদেহের কথা মনে পড়ে। এহেন পরিবেশে কবি প্রত্যক্ষ করেন রোজকার মতো শান্ত অনুগতভাবে বাংলাদেশে নেমে আসছে নীল সন্ধ্যা। এই সন্ধ্যার মায়াবী মেদুরতায় আবিষ্ট হয়ে যান কবি। তাঁর মনে হয় এই অপরূপ সুন্দর সন্ধ্যা যেন কেশবতী কন্যা, যার চুলের স্পর্শ কবি অনুভব করেন সর্বত্র। কবি উপলব্ধি করেন পৃথিবীর অন্য কোনো স্থান এ সান্ধ্যসৌন্দর্যের স্পর্শ পায় না। অথচ বাংলাদেশের সবখানে এই সৌন্দর্য চুম্বন করে যায়- ‘হিজলে কাঁঠালে জামে’। আকাশে সাতটি তারা ফুটে উঠলে ঘাসের উপর বসে বঙ্গপ্রকৃতির স্নিগ্ধ গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে যান কবি। কবি জানেন না, পৃথিবীর আর কোথাও রূপসী কেশবতী কন্যার চুলের বিন্যাসে এত স্নিগ্ধ গন্ধ ঝরে পড়ে কি না। সে গন্ধ কবি পান বাংলাদেশের নরম ধানে, কলমির ঘ্রাণে; সে মৃদু ঘ্রাণ কবি অনুভব করেন হাঁসের পালক, শর, পুকুরের জল, চাঁদা-সরপুঁটিদের সংস্পর্শে, আবার ব্যথিত গন্ধের ক্লান্ত নীরবতা কবি উপলব্ধি করেন কিশোরের পায়ে দলা মুথাঘাস কিংবা লাল লাল বটের ফলে। সান্ধ্যকালীন বঙ্গপ্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দর্য ও বিচিত্র গন্ধের মাঝে কবি অনুভব করেন বাংলাদেশের প্রাণের স্পন্দন।