আকরিক লোহার গুরুত্ব ও ব্যবহার লেখো |
আকরিক লোহার গুরুত্ব:
আকরিক লোহা ক্ষয়িষ্ণু, অপুনর্ভব ধাতব খনিজ পদার্থ। এই খনিজ সম্পদ থেকে প্রস্তুত লোহা ও ইস্পাত আধুনিক সভ্যতার ধারক ও বাহক। ছোট্ট ছুঁচ থেকে শুরু করে ভারী ও বৃহৎ শিল্পে বিভিন্ন ক্ষেত্রে লোহার ব্যবহার অপরিসীম। তাই, সকল শিল্পের মূল বা মেরুদণ্ড হল লোহা। মানুষের জীবনধারণের প্রতিটি মুহূর্তে লোহার ব্যবহার অপরিহার্য। এই কারণে আধুনিক যুগকে ‘লৌহযুগ’ বা আধুনিক সভ্যতাকে ‘লোহা নির্ভর সভ্যতা’ বলা হয়।
আকরিক লোহার ব্যবহার :
আকরিক লোহার ব্যবহার মূলত কম, কিন্তু আকরিক লোহা থেকে তৈরি লোহা ও ইস্পাতের ব্যবহার বহুবিধ। যেমন—
• পিগ আয়রন বা লোহাপিন্ড তৈরিতে :
খনি থেকে তোলা আকরিক লোহায় যে অপ্রয়োজনীয় পদার্থ মিশে থাকে তা বাদ দেওয়ার জন্য এর সঙ্গে চুনাপাথর ও ডলোমাইট মিশিয়ে বাতচুল্লিতে গলানো হয় এবং পরিস্তুত গলিত তরল লোহা ছাঁচে ফেলে পিগ আয়রন প্রস্তুত করা হয়।
• কাঁচামাল রূপে :
আকরিক লোহা কাঁচামাল রূপে লৌহ-ইস্পাত শিল্পে এবং রং প্রস্তুতে ব্যবহার করা হয়। পিগ আয়রনের সঙ্গে ম্যাঙ্গানিজ, নিকেল, ক্রোমিয়াম প্রভৃতি মিশিয়ে বিভিন্ন ধরনের ইস্পাত তৈরি করা হয়।
• লৌহ-ইস্পাতের ব্যবহার:
(ⅰ) গৃহ নির্মাণে – রড, গ্রিল, বিম প্রভৃতি নির্মাণে ব্যবহৃত হয়;
(ii) গৃহস্থলিতে – বাসনপত্র, আসবাবপত্র, ছুরি, কাঁচি, ছুঁচ প্রভৃতি তৈরি হয়;
(iii) ভারী যন্ত্রপাতি নির্মাণে – বয়লার, গিয়ার, স্টিম টারবাইন, রেডিয়েটর প্রভৃতি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়;
(iv) পরিবহণে – জাহাজ, রেলপথ, রেল ইঞ্জিন, রেলগাড়ি, সেতু, রিকশা, সাইকেল, বিভিন্ন মোটরগাড়ি, বাস, লরি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়;
(v) কৃষি যন্ত্রপাতি – লাঙল, ট্রাক্টর, কোদাল, কাস্তে, হারভেস্টার প্রভৃতি তৈরিতে লোহা ব্যবহৃত হয়;
(vi) সমরাস্ত্র – বন্দুক, গুলি, ট্যাঙ্ক, মেশিনগান, বেয়নেট, মিশাইল প্রভৃতি তৈরি হয়;
(vii) শিল্পক্ষেত্রে – ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে নানা যন্ত্রপাতি, করাত, হাতুড়ি, বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ, কর্নিক, বাটালি, নাট, বল্টু প্রভৃতি নির্মাণে ব্যবহৃত হয়;
(viii) চিকিৎসা ব্যবস্থায় – শল্য চিকিৎসার বিভিন্ন সরঞ্জাম প্রস্তুতে ব্যবহৃত হয়।
• স্পঞ্জ আয়রন উৎপাদনে :
বিগালকের সাহায্যে ছাঁট লোহার অপদ্রব্য দূর করে স্পঞ্জ আয়রন তৈরি করা হয়, যা ক্ষুদ্র ইস্পাত শিল্পের কাঁচামাল রূপে ব্যবহৃত হয়।