অসহযোগ আন্দোলনে নারীর ভূমিকা আলোচনা করো। |
ভূমিকা
ঊনবিংশ শতকে বাংলায় তথা ভারতে নারী জাগরণের যে সূচনা হয় বিংশ শতকের শুরুতে তা রাজনৈতিক ক্ষেত্রে একটি বড়ো ভূমিকা পালন করে। স্বদেশি এবং অসহযোগ আন্দোলনে তার পরিচয় পাওয়া যায়। এমনকি সমাজের প্রান্তিক নারীরাও এই আন্দোলনে পুরুষদের সহযোগিতা করেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও তারা রাজনৈতিকভাবে সচেতন ও শিক্ষিত ছিলেন।
অসহযোগ আন্দোলনে নারীর ভূমিকা
অসহযোগ আন্দোলন
গান্ধিজির নেতৃত্বে সর্বভারতীয় গণ আন্দোলনগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল অসহযোগ আন্দোলন। এই আন্দোলনের কয়েকটি কর্মসূচি নারীদের আকৃষ্ট করেছিল। যেমন- চরকায় সুতো কাটা, বিদেশি পণ্য বর্জন, মাদক বর্জন প্রভৃতি। তাই এই আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো।
নেতৃত্ব
এই আন্দোলন পরিচালনায় কয়েকজন নারী স্থানীয়ভাবে নেতৃত্ব দেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন সরোজিনী নাইডু, বাসন্তী দেবী, ঊর্মিলা দেবী, সুনীতি দেবী, কমলা নেহরু, নেলী সেনগুপ্ত, বাঈ আম্মান, আশালতা সেন, জ্যোতির্ময়ী গাঙ্গুলি প্রমুখ।
সংগঠন
রাষ্ট্রীয় স্ত্রী সংঘ, নারী কর্মমন্দির, নারী সত্যাগ্রহ সমিতি প্রভৃতি সংগঠন নারীদের নিয়ে গড়ে উঠেছিল। এই সমস্ত সংগঠন তাদের সদস্যাদের আন্দোলনে যোগ দিতে উদ্বুদ্ধ করে। এ ছাড়া নারীরা বিভিন্ন সভা করে এবং সেখানে বক্তৃতার মাধ্যমে উপস্থিত নারীদের আন্দোলনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানায়। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য, সরোজিনী নাইডু সত্যাগ্রহ সপ্তাহে (৬-১৩ এপ্রিল, ১৯২১ খ্রি.) এক সভায় নারীদের রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত হওয়ার কথা বলেন। মৌলানা শওকত আলির মা বাঈ আম্মান আহমেদাবাদ ও লাহোরে মহিলা সম্মেলনে বক্তৃতা দেন। তিনিও এই আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণের আহ্বান জানান।
কার্যকলাপ
এই আন্দোলনে বয়কটের মতো কর্মসূচিতে নারীদের সীমিত অংশগ্রহণের পক্ষপাতী ছিলেন গান্ধিজি। কিন্তু নারী নেতৃত্ব আরও বড়ো ভূমিকা পালনের দাবি জানায়। প্রিন্স অফ ওয়েলস-এর বোম্বাই আসার সময় ১০০০ জন মহিলা সমবেত হয়ে প্রতিবাদ জানান ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে। বাসন্তী দেবী, ঊর্মিলা দেবী ও সুনীতি দেবী কলকাতার রাস্তায় বিক্ষোভ দেখিয়ে কারাবরণ করেন। বহু সাধারণ নারী কলকাতা ও মফস্সলে (ঢাকা, বরিশাল ও অন্যান্য স্থানে) পিকেটিং ও বয়কট আন্দোলনে যোগ দেন। অনেকে চরকায় সুতো কাটতে এবং তাঁতে কাপড় বুনতে শুরু করেছিলেন।
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নারীদের অবদান
অসহযোগ আন্দোলনের প্রভাব সাধারণ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নারীদের উপরেও পড়েছিল। পূর্ব গোদাবরী জেলার দেবদাসীরা তাদের অর্থ ও অলংকার গান্ধিজিকে দান করেন। কলকাতার নিম্নবর্ণের নারীরাও কংগ্রেস তহবিলে প্রচুর অর্থ দান করেছিলেন।
মূল্যায়ন
এই আন্দোলনে প্রধানত শহুরে মহিলারা অংশগ্রহণ করেন। তারা বয়কট কর্মসূচিতে ও পথসভায় যোগ দেন। কিন্তু তাদের প্রচার বা আবেদন গ্রামের সিংহভাগ নারীর কাছে পৌঁছোয়নি। তারা আন্দোলনের উদ্দেশ্য বা কর্মসূচি সম্পর্কে অবহিত ছিলেন না। নারীমুক্তির কোনো কর্মসূচিও তাদের ছিল না। তবুও দীর্ঘদিনের জড়তা ভেঙে নারীদের পথে নামা ভারতীয় রাজনীতির আঙিনায় এক অভিনব ঘটনা ছিল। উপরন্তু এই সময় যে চেতনা সীমিত নারীর মধ্যে সঞ্চারিত হয় আগামী দিনে তা ব্যাপক আকার ধারণ করে।