অসহযোগ আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা আলোচনা করো
|
ভূমিকা
১৯২০ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে অহিংস-অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়। অসহযোগ আন্দোলনের মূল কথা ছিল ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে কোনোরকম সহযোগিতা না করা। মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে পরিচালিত অসহযোগ আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে নারীদের অংশগ্রহণ অনেক বেশি বেড়ে যায়।
অসহযোগ আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণের প্রস্তাব গ্রহণ
১৯২০ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বরে কংগ্রেসের নাগপুর অধিবেশনে অসহযোগ আন্দোলনের প্রস্তাব গৃহীত হয়। এই অধিবেশনে অসহযোগ আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণের কথা বলা হয়।
আন্দোলনে নারীদের কর্মসূচি
অসহযোগ আন্দোলনে নারীদের জন্য নির্ধারিত কর্মসূচি ছিল সীমিত। এতে নারীদের শুধুমাত্র স্বদেশি দ্রব্য গ্রহণ ও বিদেশি দ্রব্য বর্জন করার কথা বলা হয়।
নারীদের ভূমিকা
অসহযোগ আন্দোলনে নারীরা সীমিত কর্মসূচির মধ্যে আবদ্ধ থাকেনি। তারা সক্রিয়ভাবে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে।
- দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নারীরা সভা, মিছিল, পিকেটিং-এ অংশ নেয়।
- ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের ১৭ নভেম্বর ইংল্যান্ডের যুবরাজ বা প্রিন্স অফ ওয়েলস ভারতভ্রমণে এলে হাজার হাজার নারী বোম্বাই শহরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
- ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে চিত্তরঞ্জন দাশের নেতৃত্বে নারীরাও প্রকাশ্যে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করে। এই বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করে কারারুদ্ধ হন চিত্তরঞ্জন দাশের স্ত্রী বাসন্তী দেবী, বোন ঊর্মিলা দেবী ও ভাইঝি সুনীতি দেবী।
- তারপর ঊর্মিলা দেবী চিত্তরঞ্জন দাশের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে নারী কর্মমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। কলকাতায় সভাসমিতিকে ব্রিটিশ সরকার বেআইনি ঘোষণা করলে নারী কর্মমন্দির-এর সদস্যরা আইন অমান্য করার দায়িত্ব গ্রহণ করে।
- ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে স্টিমার ধর্মঘট হলে নেলী সেনগুপ্তর নেতৃত্বে গণ আন্দোলন গড়ে ওঠে।
- জাতীয় কংগ্রেস তিলক স্বরাজ তহবিল গঠন করে ১ কোটি টাকা আদায় করার কর্মসূচি নেয়। বাংলার নারীরা এই তহবিলে অর্থ ও নিজেদের অলংকার দান করেন।
মূল্যায়ন
অসহযোগ আন্দোলনে নারীদের যোগদান ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। নারীদের যোগদানের ফলে এই আন্দোলন প্রকৃত গণ আন্দোলনে পরিণত হয়েছিল। ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার বলেছেন, “এই আন্দোলনে সারা দেশ জুড়ে এক অভূতপূর্ব উত্তেজনা পরিলক্ষিত হয়।”