অসহযোগ আন্দোলনে ছাত্রদের ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করো। |
ভূমিকা
১৯২০ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় কংগ্রেস মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে অহিংস-অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়। অসহযোগ আন্দোলনের মূল কথা ছিল ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে কোনোরূপ সহযোগিতা না করা। গান্ধিজি ঘোষণা করেছিলেন, বিদেশি সরকারের সঙ্গে কোনোরকম সহযোগিতা করা পাপ। অসহযোগ আন্দোলনে ছাত্ররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি
গান্ধিজি বলেছিলেন, চাষ করার আগে খেত থেকে আগাছা (ইংরেজি শিক্ষা) উপড়ে ফেলা আবশ্যক। অসহযোগ আন্দোলনে দু-ধরনের কর্মসূচি ছিল-
[1] ইতিবাচক (Positive) বা গঠনমূলক এবং
[2] নেতিবাচক (Negative) বা ধ্বংসাত্মক।
ইতিবাচক কর্মসূচির মধ্যে ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন, দেশীয় বস্ত্র বা খদ্দরের ব্যবহার, চরকার ব্যবহার, আন্দোলনের জন্য অর্থ সংগ্রহ প্রভৃতি।
নেতিবাচক কর্মসূচির মধ্যে ছিল স্কুল-কলেজ, সরকারি চাকরি, সরকারি খেতাব, বিদেশি দ্রব্য প্রভৃতি বর্জন করা।
অসহযোগ আন্দোলনে ছাত্রদের ভূমিকা
নেতিবাচক কার্যাবলি: অসহযোগ আন্দোলনের নেতিবাচক কর্মসূচি সবচেয়ে বেশি সফল হয়েছিল শিক্ষাক্ষেত্রে। বাংলায় ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাস পর্যন্ত প্রতি মাসে প্রায় ২০ জন করে শিক্ষক বা প্রধান শিক্ষক পদত্যাগ করেছিলেন সরকারি স্কুলগুলি থেকে। ছাত্রদের মধ্যে ১১,১৫৭ জন ছাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। ছাত্রদের এই আন্দোলন বাংলা, বোম্বাই, পাঞ্জাব, যুক্তপ্রদেশ, বিহার, উড়িষ্যা, আসাম প্রভৃতি স্থানে ছড়িয়ে পড়েছিল। এই সময় চিত্তরঞ্জন দাশ বলেছিলেন, ‘Education can wait, Swaraj cannot.’
- ছাত্ররা বিদেশি দ্রব্য বয়কটের জন্য প্রচার করে।
- বিদেশি দ্রব্য যেমন- কাপড়, নুন, চিনি, মদ প্রভৃতির দোকানের সামনে পিকেটিং করে।
ইতিবাচক কার্যাবলি: ছাত্ররা অসহযোগ আন্দোলনের ইতিবাচক কর্মসূচি রূপায়ণেও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে।
- ছাত্ররা দেশীয় দ্রব্য ব্যবহারের জন্য প্রচার শুরু করে।
- জাতীয় আন্দোলনে প্রয়োজনীয় অর্থসংগ্রহে সহায়তা করে।
- অসহযোগ আন্দোলনের সময় অনেকগুলি জাতীয় বিদ্যালয় গড়ে ওঠে। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল- জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া, কাশী বিদ্যাপীঠ, গুজরাট বিদ্যাপীঠ ইত্যাদি। তা ছাড়া বাংলায় ১৯০টি, বিহারে ৪৪২টি, বোম্বাই-এ ১৮৯টি এবং যুক্তপ্রদেশে ১৩৭টি জাতীয় বিদ্যালয় স্থাপিত হয়।
- ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের যুবরাজ প্রিন্স অফ ওয়েলস ভারতে এলে ছাত্ররা কলকাতা শহরে ধর্মঘট পালন করে। ছাত্ররা কালো পতাকা নিয়ে ‘যুবরাজ ফিরে যাও’ ধ্বনি দেয়।
মূল্যায়ন
অসহযোগ আন্দোলনে ছাত্ররা গান্ধিজি নির্দেশিত অহিংস পথে আন্দোলনে শামিল হয়েছিল। ছাত্রদের যোগদানের ফলে এই আন্দোলন গণচরিত্র লাভ করে।