|
অভিজাতরা কেন বিদ্রোহ করেছিল? |
অভিজাত বিদ্রোহের কারণসমূহ
ফরাসি সম্রাট ষোড়শ লুইয়ের অর্থমন্ত্রীগণ অভিজাত সম্প্রদায়ের ওপর কর বসানোর উদ্যোগ গ্রহণ করার পর থেকেই রাজার সঙ্গে অভিজাত সম্প্রদায়ের বিরোধ শুরু হয়। অভিজাতদের বিরোধিতার ফলেই রাজা বাধ্য হয়ে অভিজাতদের হাত থেকে আইন এবং কর সংক্রান্ত অধিকার কেড়ে নেন। এর ফলে ফ্রান্সের নানা স্থানে বিদ্রোহ দেখা দেয়। অভিজাতরা যাজক এবং বুর্জোয়াসহ সমস্ত মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করলে এই বিদ্রোহ গণবিদ্রোহের আকার ধারণ করে। পার্লামেন্ট ও প্রাদেশিক সভা এই বিদ্রোহকে সমর্থন জানায়। রাজা শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহের কাছে নতিস্বীকার করতে বাধ্য হন। প্যারিসের পার্লামেন্ট পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয় এবং পার্লামেন্ট প্রণীত সংস্কারগুলি বাতিল করা হয়। অর্থমন্ত্রী ব্রিয়াঁকে পদচ্যুত করার পর নেকারকে পুনরায় অর্থমন্ত্রী পদে নিযুক্ত করা হয়। নেকার রাজাকে স্টেটস জেনারেলের অধিবেশন ডাকার পরামর্শ দেন। রাজা 175 বছর পরে স্টেটস জেনারেল বা জনপ্রতিনিধি সভার অধিবেশন আহ্বান করেন। স্টেটস জেনারেলের অধিবেশনের দাবি মেনে নেওয়ায় অভিজাত বিপ্লব জয়যুক্ত হয়। স্টেটস জেনারেলের অধিবেশন আহ্বানের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় ফরাসি বিপ্লব।
তাৎপর্য
বুরবোঁ রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে অভিজাতদের বিদ্রোহ ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। তবে অভিজাতদের বিপ্লব নিঃসন্দেহে ছিল প্রতিক্রিয়াশীল বিপ্লব। কারণ অভিজাতরা পুরোনো ব্যবস্থার পরিবর্তনের কথা বলেননি বরং তাঁরা সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থা ও বিশেষ অধিকার বজায় রাখার দাবি করেছিলেন। অভিজাতদের অভ্যুত্থান বিপ্লব থেকে না হলেও এর তাৎপর্যকে অস্বীকার করা যায় না।
① এই অভ্যুত্থানে সুবিধাভোগী শ্রেণি রাজার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়। বুর্জোয়াদের সমর্থনে অভিজাত অভ্যুত্থান রাজ-শাসন বিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয়।
② শ্রেণিস্বার্থ বজায় রাখার জন্য অভিজাতরা রাজার ক্ষমতা খর্ব করতে চেয়েছিলেন। কারণ তাঁরা প্রত্যাশা করেছিলেন যে রাজাদের ক্ষমতা খর্ব হলেও অভিজাতদের স্বার্থ রক্ষিত হবে। তবে বিদ্রোহী অভিজাতরা বুঝতে পারেননি যে, পূর্বতন শাসনব্যবস্থায় রাজশক্তি ও সুবিধাভোগী শ্রেণির স্বার্থ একে অপরের পরিপূরক। রাজশক্তির ক্ষমতা হ্রাস হলে সুবিধাভোগী শ্রেণির ওপরও আঘাত আসবে।
③ ঐতিহাসিক লেফেভর অভিজাত বিদ্রোহকে অভিজাত বিপ্লব বলেছেন। এ কথা সত্য যে বিদ্রোহের প্রথম পর্যায়ে অভিজাতরা নেতৃত্বে দিয়েছিল। কিন্তু তাঁদের হাত থেকে বিদ্রোহের নেতৃত্ব প্রথমে বুর্জোয়াদের হাতে এবং পরে সাঁকুলোৎ ও কৃষক শ্রেণির হাতে চলে আসে। অভিজাত বিপ্লবের ফলেই ফরাসি গণবিদ্রোহের সূচনা হয়। সুতরাং, অভিজাত বিপ্লবকে ফরাসি বিপ্লবের প্রবর্তক বলা যায়।