স্বরধ্বনি সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর

সূচিপত্র

স্বরধ্বনি সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর
স্বরধ্বনি সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর

১। স্বরধ্বনি কাকে বলে?

যেসব ধ্বনি উচ্চারণকালে আমাদের মুখগহ্বর খোলা থাকে, শ্বাসবায়ু ফুসফুস থেকে প্রবাহিত হতে গিয়ে কোথাও বাধা পায় না, ধাক্কা খায় না এবং স্বচ্ছন্দে শ্রুত হয় সেইসব ধ্বনিই স্বরধ্বনি। এর লিখিতরূপ স্বরবর্ণ।

২। মান্য চলিত বাংলা ভাষায় উচ্চারিত স্বরধ্বনি কটি এবং লিখিত স্বরবর্ণ কটি?

মান্য চলিত বাংলা ভাষায় উচ্চারিত স্বরধ্বনি সাতটি। যথা-অ, আ, ই, উ, এ, ও, ঔ। মান্য চলিত বাংলা ভাষায় লিখিত স্বরবর্ণ ১২টি। যথা-অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ, ঋ, ৯, এ, ঐ, ও, ঔ।

৩। সময় বা উচ্চারণকালের ভিত্তিতে বাংলা স্বরধ্বনিকে কটি ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী?

সময় বা উচ্চারণকালের ভিত্তিতে বাংলা স্বরধ্বনিকে দু-ভাগে ভাগ করা চলে যথা- হ্রস্ব স্বরধ্বনি, দীর্ঘ স্বরধ্বনি।

৪। হ্রস্ব স্বরধ্বনি কাকে বলে?

যে স্বরধ্বনি উচ্চারণে সময় অপেক্ষাকৃত কম লাগে, তাদের হ্রস্ব স্বরধ্বনি বলে। যেমন-অ, ই, উ, ঋ, এ, ও।

৫। দীর্ঘ স্বরধ্বনি কাকে বলে?

যে স্বরধ্বনি উচ্চারণে সময় হ্রস্বধ্বনি অপেক্ষা বেশি লাগে, তাদের দীর্ঘ স্বরধ্বনি বা দীর্ঘস্বর বলে। যেমন-আ, ঈ, উ, ঐ, ঔ, অ্যা ইত্যাদি।

৬। প্লুতস্বর কাকে বলে?

গানে, আবৃত্তিতে, কান্নায় কিংবা দূর থেকে কোনো ব্যক্তিকে আহ্বান করার সময় মৌলিক স্বরধ্বনিকে অতিরিক্ত মাত্রায় টেনে উচ্চারণ করা হয়। এইভাবে উচ্চারিত স্বরধ্বনিকে প্লুতস্বর বলে। যেমন-মা-আ-আ-আ। এটি কমপক্ষে তিনটি মাত্রার হয় এবং এর লিখিত কোনো চিহ্ন নেই।

৭। অনুনাসিক স্বর কাকে বলে?

যেসব স্বরধ্বনি উচ্চারণ করার সময়ে শ্বাসবায়ু মুখের বদলে নাক দিয়ে নির্গত হয়, তাদের অনুনাসিক স্বরধ্বনি বলা হয়। যেমন-আঁ, ই, উ, এ, ওঁ ইত্যাদি।

৮। বিভাজনের ভিত্তিতে বাংলা স্বরধ্বনিকে কটি ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী?

বিভাজনের ভিত্তিতে বাংলা স্বরধ্বনিকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- মৌলিক স্বরধ্বনি, যৌগিক স্বরধ্বনি।

৯। মৌলিক স্বরধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

যে সমস্ত স্বরধ্বনিকে আর ভাঙা যায় না বা বিশ্লেষণ করা যায় না, তাদের মৌলিক স্বরধ্বনি বলে। যেমন-অ, আ, ই, উ, এ, ও, অ্যা ইত্যাদি।

১০। যৌগিক স্বরধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

যে স্বরধ্বনিকে ভাঙা যায় বা বিশ্লেষণ করা যায় বা একাধিক স্বরধ্বনির সংযোগে যে স্বরধ্বনি গড়ে ওঠে, তাদের যৌগিক স্বরধ্বনি বলে। যেমন-ঐ ও+ই, ঔ = ও + উ।

১১। নিহিত স্বরধ্বনি কাকে বলে?

পূর্ণ ব্যঞ্জনের মধ্যে একটি ‘অ’ ধ্বনি লুকিয়ে থাকে (চ = + চ্ + অ)। উচ্চারিত হলেও তা লেখায় থাকে না বলে এদের নিহিত স্বরধ্বনি বলে।

১৩। বিভিন্ন ভাষাতাত্ত্বিকদের মতে যৌগিক স্বরের সংখ্যা কটি তা সংক্ষেপে লেখো।

ভাষাচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে বাংলা ভাষায় মোট যৌগিক স্বর ২৫টি, পবিত্র সরকারের মতে ১৭টি। কারও মতে ২৭টি যৌগিক স্বর আছে। এই যৌগিক স্বরগুলি পূর্ণস্বর+ অর্ধস্বর নিয়ে গঠিত। যেমন-‘আ’ পূর্ণস্বর ‘ই’ অর্ধস্বর নিয়ে ‘আই’ > ভাই, চাই, খাই ইত্যাদি। এরকম-কেউ, ফেউ, খাও, যাও, চাও, বয়, হয়, নয়, হাউ, মাউ, খাউ, বই, সই, কই, ছায়া, কায়া, চওড়া, গেরুয়া, কুয়ো, ধুঁয়ো ইত্যাদি। ‘এ’ (অ্যা) ‘অ’ দিয়ে গঠিত যৌগিক স্বরধ্বনির সংখ্যা তুলনায় কম।

১৪। উচ্চারণরীতি এবং প্রকৃতি অনুসারে বাংলা মৌলিক স্বরধ্বনিকে কয়ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী?

উচ্চারণরীতি এবং প্রকৃতি অনুসারে বাংলা মৌলিক স্বরধ্বনিকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়- কে জিভের ওঠানামা অনুযায়ী। জিভের অগ্রপশ্চাৎ গতি অনুযায়ী। আকৃতি অনুযায়ী। ঠোঁটের ঠোঁটের প্রসার বা উন্মুক্তি অনুযায়ী। ও জিহ্বার শেষ অবস্থান অনুযায়ী।

১৫ । জিভের ওঠানামা অনুযায়ী স্বরধ্বনি কত প্রকার ও কী কী?

জিভের ওঠানামা অনুযায়ী স্বরধ্বনি চার প্রকার। যথা- ক উচ্চস্বরধ্বনি, ও নিম্নস্বরধ্বনি, এ উচ্চমধ্য স্বরধ্বনি, নিম্নমধ্য স্বরধ্বনি।

১৬। উচ্চ স্বরধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

যে স্বরধ্বনি উচ্চারণে জিভ সবচেয়ে ওপরে উঠে আসে, সেগুলিকে উচ্চ স্বরধ্বনি বলে। যেমন-ই, উ।

১৭। নিম্ন স্বরধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

যে স্বরধ্বনি উচ্চারণে জিভ সবচেয়ে নীচে থাকে, তাদের নিম্ন স্বরধ্বনি বলে। যেমন-আ।

১৮। উচ্চমধ্য স্বরধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

যে স্বরধ্বনি উচ্চারণে জিভ উচ্চ অপেক্ষা একটু নীচে থাকে, তাদের উচ্চমধ্য স্বরধ্বনি বলে। যেমন-এ, ও।

১৯। নিম্নমধ্য স্বরধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

যে স্বরধ্বনি উচ্চারণে জিভ উচ্চমধ্যের নীচে এবং নিম্নের ওপরে অবস্থান করে, তাকে নিম্নমধ্য স্বরধ্বনি বলে। যেমন-অ্যা, অ।

২০। জিভের অগ্রপশ্চাৎ গতি অনুযায়ী স্বরধ্বনি কত প্রকার ও কী কী?

জিভের অগ্রপশ্চাৎ গতি অনুযায়ী স্বরধ্বনি তিনপ্রকার। যথা- স্বরধ্বনি। সম্মুখ স্বরধ্বনি, পশ্চাৎ স্বরধ্বনি, কেন্দ্রীয় স্বরধ্বনি।

২১। সম্মুখ স্বরধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

যে স্বরধ্বনি উচ্চারণে জিভ সামনে এগিয়ে আসে, সেগুলিকে সম্মুখ স্বরধ্বনি বলে। যেমন-ই, এ, অ্যা।

২২। পশ্চাৎ স্বরধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

যে স্বরধ্বনি উচ্চারণে জিভ পিছিয়ে যায়, তাদের পশ্চাৎ স্বরধ্বনি বলে। যেমন-উ, ও, অ।

২৩। কেন্দ্রীয় স্বরধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

যে স্বরধ্বনি উচ্চারণে জিভ এগোয় বা পিছোয় না, তাকে কেন্দ্রীয় স্বরধ্বনি বলে। যেমন-আ।

২৪। ঠোঁটের আকৃতি অনুযায়ী স্বরধ্বনি কত প্রকার ও কী কী?

ঠোঁটের আকৃতি অনুযায়ী স্বরধ্বনি তিনপ্রকার। যথা- বর্তুল বা কুঞ্চিত স্বরধ্বনি, বিস্তৃত বা প্রসূত স্বরধ্বনি, (গ) মধ্যস্থ স্বরধ্বনি।

২৫। বর্তুল বা কুঞ্চিত স্বরধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

যে স্বরধ্বনি উচ্চারণে ঠোঁট দুটি গোল বা বর্তুল আকার নেয়, তাকে বর্তুল বা কুঞ্চিত স্বরধ্বনি বলে। যেমন-উ, অ, ও।

২৬। বিস্তৃত বা প্রসূত স্বরধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

যে স্বরধ্বনি উচ্চারণে ঠোঁট দুটি দু-পাশে ছড়িয়ে যায়, তাদের বিস্তৃত বা প্রসৃত স্বরধ্বনি বলে। যেমন-ই, এ, অ্যা।

২৭। মধ্যস্থ স্বরধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

যে স্বরধ্বনি উচ্চারণ করার সময় জিহ্বা সংকুচিত বা প্রসারিত না হয়ে স্বাভাবিক থাকে, তাকে বলে মধ্যস্থ স্বরধ্বনি বলে। যেমন-আ।

২৮। ঠোঁটের প্রসার বা উন্মুক্তি অনুযায়ী স্বরধ্বনি কত প্রকার ও কী কী?

ঠোঁটের প্রসার বা উন্মুক্তি অনুযায়ী স্বরধ্বনি চার প্রকার। যথা- বিবৃত স্বরধ্বনি, সংবৃত স্বরধ্বনি, অর্ধবিবৃত স্বরধ্বনি, অর্ধসংবৃত স্বরধ্বনি। 

২৯। বিবৃত স্বরধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

যে স্বরধ্বনি উচ্চারণে ঠোঁট সবচেয়ে উন্মুক্ত (হাঁ) থাকে, তাকে বিবৃত স্বরধ্বনি বলে। যেমন-আ।

৩০। সংবৃত স্বরধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

যে স্বরধ্বনি উচ্চারণে ঠোঁট সবচেয়ে কম খোলা বা অপ্রশস্ত থাকে, তাকে সংবৃত স্বরধ্বনি বলে। যেমন-ই, উ।

৩১। অর্ধবিবৃত স্বরধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

বিবৃত স্বরধ্বনির থেকে একটু কম ঠোঁট মেলে যে স্বরধ্বনি উচ্চারণ করা হয়, তাকে অর্ধবিবৃত স্বরধ্বনি বলে। যেমন-অ্যা, অ।

৩২। অর্ধসংবৃত স্বরধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

সংবৃত স্বরধ্বনির চেয়ে একটু বেশি ঠোঁট প্রসারিত করে যে স্বরধ্বনি উচ্চারণ করা হয়, তাদের অর্ধসংবৃত স্বরধ্বনি বলে। যেমন-এ, ও।

৩৩। জিহ্বার শেষ অবস্থান অনুযায়ী স্বরধ্বনি কয়টি ও কী কী?

জিহ্বার শেষ অবস্থান অনুযায়ী স্বরধ্বনি পাঁচ প্রকার। যথা- কণ্ঠ্য স্বরধ্বনি, তালব্য স্বরধ্বনি, ওষ্ঠ্য স্বরধ্বনি, কণ্ঠ্যতালব্য স্বরধ্বনি, ও কণ্ঠ্যৌষ্ঠ্য স্বরধ্বনি।

৩৪। কণ্ঠ্যস্বরধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

যেসব স্বরধ্বনি উচ্চারণ করার সময় জিহ্বামূল কণ্ঠে অবস্থান করে উচ্চারিত হয়, তাকে কণ্ঠ্যস্বরধ্বনি বলে। যেমন-অ, আ।

৩৫। তালব্য স্বরধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

যেসব স্বরধ্বনি উচ্চারণ করার সময় জিহ্বাগ্র তালুর কাছে অবস্থান করে, তাকে তালব্য স্বরধ্বনি বলে। যেমন-ই, অ্যা।

৩৬। ওষ্ঠ্য স্বরধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

যেসব স্বরধ্বনি উচ্চারণ করার সময় জিহ্বাগ্র অধরোষ্ঠের কাছে অবস্থান করে, তাকে ওষ্ঠ্য স্বরধ্বনি বলে। যেমন-উ।

৩৭। কণ্ঠ্যতালব্য স্বরধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

যেসব স্বরধ্বনি উচ্চারণ করার সময় জিহ্বা নরম ও শক্ত তালুতে অবস্থান করে, তাকে কণ্ঠ্যতালব্য স্বরধ্বনি বলে। যেমন-এ।

৩৮। কণ্ঠৌষ্ঠ্য স্বরধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

যে স্বরধ্বনি উচ্চারণকালে জিহ্বা একইসঙ্গে তালু এবং অধরোষ্ঠের কাছে অবস্থান করে, তাকে কণ্ঠৌষ্ঠ্য স্বরধ্বনি বলে। যেমন-ও।

৩৯। উচ্চারণস্থান অনুযায়ী স্বরধ্বনির শ্রেণিবিভাগ করো।

উচ্চারণস্থান অনুযায়ী স্বরধ্বনির শ্রেণিবিভাগ-

৪০। স্বরধ্বনিগুলির উচ্চারণ অনুসারে বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

অ = নিম্নমধ্য, পশ্চাৎ, বর্তুল, অর্ধবিবৃত, কণ্ঠ।
আ = নিম্ন, কেন্দ্রীয়, বিবৃত, কণ্ঠ।
ই= উচ্চ, সম্মুখ, প্রসূত, সংবৃত, কণ্ঠ।
উ = উচ্চ, পশ্চাৎ, বর্তুল, সংবৃত, কণ্ঠ।
এ = উচ্চমধ্য, সম্মুখ, প্রসূত, অর্ধসংবৃত, কণ্ঠ্যতালব্য।
ও = উচ্চমধ্য, পশ্চাৎ, বর্তুল, অর্ধসংবৃত, কণ্ঠ্যৌষ্ঠ্য।

৪১। বাংলা ভাষায় ‘অ’ ধ্বনির বিবৃত ও স্বাভাবিকরূপে উচ্চারণের সূত্রগুলি লেখো।

কে জল, বল, খল, ছল, কখন, চলন ইত্যাদিতে ‘অ’-এর উচ্চারণ স্বাভাবিক বা স্বকীয় (জ্ অ)।
শব্দের দ্বিতীয় স্বর অ, আ, ও হলে শব্দের আদিতে থাকা ‘অ’ উচ্চারণও স্বাভাবিক হয়। যেমন-অজয়, অমর, অচল, অমল, অলোক, অবাক, অসাড় ইত্যাদি।
শব্দ মধ্যের ব্যঞ্জনযুক্ত ‘অ’-এর উচ্চারণ স্বাভাবিক। যেমন-নয়ন, জনম, করম ইত্যাদি।
‘না’ বা ‘নেতি’ শব্দের শুরুতে থাকলে ‘অ’-এর উচ্চারণ স্বাভাবিক হয়। যেমন-অচল, অনড়, অপরাজিত, অস্থির ইত্যাদি।
অনেক শব্দে ‘অ’ উচ্চারণ হলে এক অর্থ এবং ‘অ’-‘ও’ রূপে উচ্চারিত হলে অন্য অর্থ হয়ে যায়। যেমন-কাল (কাল), কাল (কালো), বার (বার্); বার (বারো) ইত্যাদি।
একদলের শব্দে ‘অ’ স্বাভাবিক কিন্তু শেষে ‘ন’ বা ‘ণ’ থাকলে তা ‘ও’ হয়ে উচ্চারিত হয়। যেমন-চল, ঘর, কিন্তু মন > মোন।
‘স’ এবং ‘সম্’ উপসর্গযুক্ত শব্দের আদিতে ‘অ’ স্বাভাবিক উচ্চারিত হয়। যেমন-সবিনয়, সম্পাদক, সচরাচর ইত্যাদি।

৪২। বাংলা ভাষায় ‘অ’ ধ্বনির সংবৃত বা বিকৃত উচ্চারণের সূত্রগুলি লেখো।

ক ক্রিয়াপদের শুরু ও শেষে ‘অ’-‘ও’ রূপে উচ্চারিত হয়। যেমন-করব (কোরব), করেছিল (কোরেছিল), করত (কোরত), চলিত (চোলিতো) ইত্যাদি।
পরবর্তী অক্ষরে ই, উ, য-ফলা, জ্ঞ, ক্ষ থাকলে ‘অ’-‘ও’ রূপে উচ্চারিত হয়। যেমন-বক্ষ (ৰোক্ষ), রবি (রোবি), বধূ (বোধূ ) লক্ষ (লোক্কো) ইত্যাদি।
শব্দের আদিতে ‘র’ ফলা থাকলে ‘অ’-‘ও’ রূপে উচ্চারিত হবে। যেমন-ভ্রমণ > ভ্রোমণ, ক্রম > ক্রোম, প্রবাস > প্রোবাস, প্রথম > প্রোথম।
এ অভিশ্রুত শব্দের আদি ‘অ’-‘ও’ রূপে উচ্চারিত হবে। যেমন-বসিলেন > বোসলেন, করিলেন > কোরলেন ইত্যাদি।
ব্যক্তি নামে অন্ত্যের ‘অ’-‘ও’ হয়ে যায়। যেমন হরিপদ > হরিপদো ইত্যাদি।
দ্বিরুক্ত বিশেষণ ও অনুকার শব্দে ‘অ’-‘ও’ হয়ে যায়। যেমন-ছলছল (ছলোছলো), ঝরঝর (ঝরোঝরো), কাঁদকাঁদ (কাঁদোকাঁদো) ইত্যাদি।
ছ সাদৃশ্যবাচক অব্যয় ‘মত’ সর্বদাই ‘মতো’ উচ্চারিত হয়।
শব্দান্তে’হ’ কিংবা যুক্তবর্ণ থাকলে ‘অ’-‘ও’ হয়। যেমন-স্নেহ, দেহ, গৃহ, রক্ত, ভক্ত, শক্ত, বর্ণ, সমৃদ্ধ ইত্যাদি।
তদ্ভব শব্দের অন্ত্য ‘অ’ সবসময়ই ‘ও’ উচ্চারণ হয়। যেমন-ভাল > ভালো, ছোট ছোটো, কত > কতো, শত > শতো, তের > তেরো, আঠার > আঠারো, পড়ান > পড়ানো, যাব > যাবো, খাব > খাবো ইত্যাদি।
চলতি বাংলায় অন্ত্য ‘অ’ লুপ্ত হয়ে যায়। যেমন-ধান > ধান, কান > কান।

৪৩। ‘আ’ ধ্বনির উচ্চারণ সম্পর্কে যা জান লেখো।

বাংলায় ‘আ’-এর উচ্চারণ সবসময়ই স্বাভাবিক। ধ্বনিটি দীর্ঘ হলেও হ্রস্বরূপে উচ্চারিত হয়। একদল বিশিষ্ট ‘আ’ দীর্ঘ হয়। যেমন-আ-কার, বাক (বা-ক্), রাম (রা-ম্) ইত্যাদি। শব্দের আদিতে ‘আ’ দীর্ঘ হয়। যেমন-আবার, তাহার ইত্যাদি। কবিতা বা গানের ক্ষেত্রে ‘আ’ দীর্ঘ হয়। যেমন-“আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে”, “আমার মাথা নত করে দাও হে।”

৪৪। কোন্ স্বরধ্বনির কোনো বর্ণরূপ নেই?

‘অ্যা’ স্বরধ্বনির কোনো বর্ণরূপ নেই।

৪৫। বাংলায় ই-ঈ ধ্বনির উচ্চারণরীতি সম্পর্কে লেখো।

‘ঈ’ ধ্বনি বাংলায় সবসময় ‘ই’ রূপেই উচ্চারিত হয়। একদল শব্দে কখনো-কখনো দীর্ঘ উচ্চারণ পাওয়া যায়। যেমন-দীন, ঈদ, ঈশ ইত্যাদি।

৪৬। উ-উ ধ্বনির উচ্চারণরীতি সম্পর্কে লেখো।

বাংলায় ‘উ’ এবং ‘উ’-এর উচ্চারণ একইরকম। সবসময়ই হ্রস্ব। তদ্ভব শব্দ উচ্চারণে কখনো-কখনো ‘উ’ উচ্চারণের প্রবণতা আসে। যেমন-মূঢ়, সূর্য, রূঢ়, ধূর্জটি ইত্যাদি।

৪৭। ‘এ’ ধ্বনির উচ্চারণরীতি সম্পর্কে লেখো।

স্বাভাবিক উচ্চারণ:
কতদ্ভব, তৎসম, দেশি, বিদেশি শব্দে মধ্য বা অন্ত্যের এ-কার স্বাভাবিক উচ্চারণ হয়। যেমন-অচলে, অনলে, আবেগে, নভেম্বর, ডিসেম্বর ইত্যাদি।
বিশেষণের শেষে ‘য়’ থাকলে ‘এ’ স্বাভাবিকভাবে উচ্চারিত হয়। যেমন-শ্রেয়, প্রেয়, অজেয় ইত্যাদি।
তৎসম শব্দের আদি ‘এ’ স্বাভাবিক। যেমন-দেহ, মেধা, একদা, একতাল, মেঘ, দেশ, একান্নবর্তী ইত্যাদি।
তৎসম শব্দে আদিস্বরে ‘এ’-কারের পর ই, ঈ, উ, ঊ বা এগুলির সঙ্গে ব্যঞ্জন যুক্ত থাকলে, ‘এ’-কার স্বাভাবিকভাবে উচ্চারিত হবে। যেমন-দেখি, খেদি, পেটুক, বেলুন, চেষ্টা, তেষ্টা ইত্যাদি।
বিকৃত উচ্চারণ:
কতদ্ভব, দেশি, বিদেশি শব্দে আদ্য ‘এ’ ‘অ্যা’ হয়ে যায়। যেমন- এখন > অ্যাখন, এমন > অ্যামন, দেখা> দ্যাখা ইত্যাদি।
একদল শব্দে ‘এ’ অনেক সময় ‘অ্যা’ হয়। যেমন-এক > অ্যাক, দেখ > দ্যাখ, লেজ > ল্যাজ ইত্যাদি।
কিছু সংখ্যাবাচক শব্দে ‘এ’ ‘অ্যা’ হিসেবে উচ্চারিত হয়। যেমন-এক > অ্যাক, এগারো> অ্যাগারো, একাত্তর > অ্যাকাত্তর, একশো > অ্যাকশো ইত্যাদি।
ব্যাতিহারসূচক শব্দে ‘এ’ ‘অ্যা’ হয়। যেমন-ঠেলাঠেলি > ঠ্যালাঠেলি, দেখাদেখি > দ্যাখাদেখি ইত্যাদি।

৪৮। স্বরধ্বনি ‘এ’ কখন ‘অ্যা’ হিসেবে উচ্চারিত হয় এবং কখন হয় না তার সূত্রগুলি লেখো।

শব্দের মধ্যে বা শেষে কখনোই ‘এ’ (অ্যা) হয় না। যেমন-জনক, প্রত্যেক, বলেন ইত্যাদি।
শব্দের দ্বিতীয় অক্ষরে ‘ই’ বা ‘উ’ থাকলে অ্যা হয় না, এ হয়। যেমন-অ্যাক, অ্যাতো কিন্তু একটি, একটু, যেমনি ইত্যাদি।
যুক্তব্যঞ্জনে ‘এ’-কার ‘এ’ হিসেবে উচ্চারিত হয়। যেমন-শ্রেয়, প্রেম, শ্রেষ্ঠ ইত্যাদি।
যে কোনো বিশেষ্য বা বিশেষণ ‘হ’ বা ‘য়’ দিয়ে শেষ হলে পূর্ববর্তী ‘এ’-কার ‘এ’ উচ্চারিত হবে। যেমন-দেহ, গেয়, কেহ, দেয় ইত্যাদি। কিন্তু ক্রিয়াপদে ‘এ’ ‘অ্যা’ হিসেবে উচ্চারিত হবে। যেমন-দ্যায়, গ্যাছে, দ্যাখা ইত্যাদি।

৪৯। বাংলায় ‘ঋ’ ধ্বনির উচ্চারণরীতি সম্পর্কে লেখো।

‘ঋ’ স্বরধ্বনির স্বাভাবিক উচ্চারণ বাংলায় নেই। এটি বাংলায় ‘রি’ উচ্চারিত হয়। যেমন-ঋতি > রিতি, ঋষি> রিষি ইত্যাদি।

৫০। ‘ঐ’ ধ্বনির উচ্চারণরীতি সম্পর্কে লেখো।

বাংলায় যৌগিকস্বর (ও+ ই = ঐ) কখনো-কখনো দীর্ঘস্বর হয়। যেমন-খৈ, সৈকত, বৈদেশিক। কবিতায় ছন্দমাধুর্য রক্ষার্থেও দীর্ঘস্বর হয়। যেমন-“ঐ আসে ঐ অতি ভৈরব হরষে”।

৫১। ‘ও’ ধ্বনির উচ্চারণরীতি সম্পর্কে লেখো।

বাংলার ‘ও’ ধ্বনির দীর্ঘস্বরটির উচ্চারণ কোথাও বিকৃত হয় না। এর হ্রস্ব উচ্চারণও হতে পারে (যোগী, ভোগী, রোগী), তবে সাধারণত এর উচ্চারণ দীর্ঘ। যেমন-যোগ, ডোেম, বোেল, কোল ইত্যাদি।

৫২। ‘ঔ’ ধ্বনির উচ্চারণরীতি সম্পর্কে লেখো।

‘ঔ’ বাংলায় আর-একটি যৌগিক স্বর (ও + উ = ঔ)। ধ্বনিটি কখনও পূর্ণরূপে (ঔপন্যাসিক) কখনও গৌণরূপে (মৌন, পৌনে) উচ্চারিত হয়। কবিতা বা গানে একে দীর্ঘায়িত করা হয়। যেমন-“যৌবন সরসী নারে।”

Leave a Comment