স্কুলস্তরে পাশফেল প্রথা তুলে দেওয়া (এই নিয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে সংলাপ) |
অনিমেষ: আচ্ছা লেখাপড়ার সঙ্গে বিন্দুমাত্র যোগই নেই, অথচ নতুন শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার এই ব্যবস্থাটাকে মেনে নেওয়ার, কোনো সংগত কারণ খুঁজে পাস তুই অর্ণব?
अর্ণর : লেখাপড়ার সঙ্গে যোগ কিংবা লেখাপড়ার প্রতি মনোযোগ বিচারের, একমাত্র মাপকাঠি কি পাশফেল। যে ছোট্ট ছেলেমেয়েটার বাবা-মা সকাল থেকে মাঠে চাষের কাজ করে বা রাস্তায় পিচ ঢালাই করে, তারা হয়তো লেখাপড়াই জানেন না। সেই সন্তানটি পড়াশোনায় দুর্বল হবে এটাই তো স্বাভাবিক। আর সে যখন পরীক্ষায় অকৃতকার্য হবে, তাকে টিসি ধরিয়ে দিবি।
অনিমেষ: কিন্তু কিছুই না শিখে একজন পাশ করতে থাকবে, এতে তার আদপেই কোনো উপকার হবে। প্রায় জোর করে বা মূলত কিছুই না করে, এভাবে কাউকে শিক্ষার মূলস্রোতে আটকে রাখা যায়।
: শেখার কথা যদি বলিস, তাহলে তো প্রশ্ন উঠবে যে পাশ করছে সে যে সব শিখছে সেটা কি সত্যি? আর শিক্ষা যদি মৌলিক অধিকার হয়, তাহলে সবচেয়ে দুর্বল পিছিয়ে-পড়া ছাত্র বা ছাত্রীটিকেও মূলস্রোতে রাখার সবরকম চেষ্টা তো করে দেখতে হবে।
অনিমেষ: মানছি। তবে সবাইকে একই পড়স্তিতে ফেলাটা ঠিক নয়। এর ফলে কিন্তু একটা শিথিল গা-ছাড়া মনোভাব আসে।
অর্ণব : দ্যাখ পরীক্ষা-পাশফেল মানেই একটা ভয় আর আতঙ্ক। ভয় দেখিয়ে লেখাপড়া শেখানোর পদ্ধতিটা সারা বিশ্বজুড়েই এখন পরিত্যক্ত। বরং মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত আর স্বাভাবিক বিকাশের প্রয়োজনে শিক্ষার যে-কোনো বিকল্প নেই। এই মনের মধ্যে জাগিয়ে তোলাটাই সবচেয়ে জরুরি। উলটে বছরের পর বছর ফেল করিয়ে আজ লক্ষ লক্ষ পড়ুয়া স্কুলছুট।
অনিমেষ: বুঝেছি। তুই শিশুশিক্ষা থেকে ফেলের জুজুটাকে সরিয়ে দেওয়ার পক্ষপাতী। যাতে উপযুক্ত পরিবেশ-পরিকাঠামো ও সাহচর্য পেলে সবচেয়ে দুর্বল ছেলেমেয়েগুলোও ক্রমশ এগিয়ে যেতে পারে।
: হ্যাঁ-রে, এদেশে শিক্ষাপদ্ধতিতে সমস্যা-গলদ কিংবা ফাঁকফোকরের তো শেষ নেই। এর ওপর ফেলের খাঁড়ার ঘায়ে তাদের অঙ্কুরেই বিনাশ ঘটালে কোনো লাভ হবে না।
অনিমেষ: সত্যিই। তোর যুক্তিগুলো অবজ্ঞা করা যায় না।