সাহিত্যপাঠের গুরুত্ব বিষয়ে দুজন স্কুল শিক্ষিকার কাল্পনিক সংলাপ |
সুদেয়া: বর্তমান প্রযুক্তি নির্ভরতার যুগে পৌঁছে শিশুরা হারাচ্ছে তাদের শৈশব, কিশোররা তাদের নবোন্মাদনা, আর যুবসম্প্রদায় হারাচ্ছে তাদের কর্মোদ্যম। মূলত, প্রযুক্তির দাসে পরিণত হয়ে আমরা আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই যন্ত্রনির্ভর হয়ে উঠছি। ফলত, মানুষ এখন অনেক বেশি বই বিমুখ হয়ে পড়ছে।
সুচরিতা: সাহিত্য জাতির জীবনের এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। সাহিত্যপাঠ ব্যতীত যেমন মানুষের ভাষাশিক্ষা সম্পূর্ণ হয় না তেমনি জগৎ ও বৃহত্তর জীবনকে চেনা তথা জানার জন্যও যে সাহিত্যপাঠ অপরিহার্য।
সুদেয়া: নিশ্চয়ই। কিন্তু বর্তমান প্রজন্মের কাছে এ কথা বিশ্বাস করাও যে বাতুলতামাত্র। যে রূপকথা কাহিনির মধ্যে আমরা আমাদের স্বপ্নের জগৎকে খুঁজে পেতাম তা এই প্রজন্মের কাছে নিতান্ত অমূলক, অবাস্তব। তারা জানেই না রূপকথা সাহিত্যের একটি বিশিষ্ট অঙ্গ, যে সাহিত্য হল যে-কোনো সংস্কৃতির মর্মমূল।
সুচরিতা : রবীন্দ্রনাথ-বঙ্কিমচন্দ্র-মধুসূদন-সুকান্ত থেকে শুরু করে আধুনিক সাহিত্য স্রষ্টাগণ তাঁদের প্রতিভার জাদুস্পর্শে যে সকল অসামান্য, অবিশ্বাস্য কিন্তু অনির্বচনীয় সাহিত্যবস্তুর সৃজন ঘটান তাকি হেলায় হারানোর জন্য? সবুজের দলকে তাই সংস্কৃতির সঙ্গে একাত্ম করে রাখার জন্য মাতৃভাষা চর্চার প্রতি তাদের অভিনিবিষ্ট করা প্রয়োজন।
সুদেয়া : শুধু মাতৃভাষা কেন, অপরাপর যে-কোনো ভাষারই ভাণ্ডার স্বয়ংসম্পূর্ণ তার অসামান্য লেখনীর দ্বারা। আর প্রযুক্তির দান খেলনাগুলি শিশুদের মনোরঞ্জন করলেও তা তাদের কোনো বিশেষ জ্ঞান প্রদান করে না। এক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের বুদ্ধির চর্চা হয়, কিন্তু মননচর্চা ব্যাহত হয়।
সুচরিতা : সেই সঙ্গে প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষ অনেক বেশি অন্তর্মুখী তথা ঘরমুখী হয়ে পড়ছে। সাহিত্যপাঠ প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের অন্তর্জগতের মিলন ঘটিয়ে তাকে প্রকৃতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংযোগ গড়ে তুলতে সহায়তা করে। শিশু-কিশোরদের অন্তর্জগৎকে আবার প্রকৃতির মহনীয়তা প্রদানের জন্য সাহিত্যপাঠ প্রয়োজন, কেন-না প্রকৃতিই সেই সংযোগসূত্র রচনা করতে পারবে।
সুদেয়া: শিক্ষিকা হিসেবে আমাদেরও তাই কর্তব্য নবপ্রজন্মের মধ্যে আবার সাহিত্যের অভিযান ঘটানো, তাদের বইমুখী করে তোলার প্রেরণা জোগানো। তারা যাতে তাদের সংস্কৃতির মূল থেকে ছিন্ন না হয়ে যায় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে আমাদেরই।