সমাজজীবনে সৌজন্য ও শিষ্টাচার অত্যন্ত জরুরি- এ নিয়ে দুজন ছাত্রের উক্তি-প্রত্যুক্তিমূলক সংলাপ |
সুব্রত: আচ্ছা সঞ্জয়, আমরা কি আবার ধীরে ধীরে হিংস্র অরণ্যচারী গুহাবাসী হয়ে উঠছি?
সঞ্জয়: হঠাৎ এ কথা বলার কারণ কী?
সুব্রত: চারিদিকে তাকালে দেখি, মানুষের মধ্যের সেই সৌজন্যপূর্ণ সামাজিক সম্পর্ক কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে! অন্তরের মাধুর্য, শিষ্টাচার সবই যেন বর্তমানে ঠুনকো কতকগুলো মেকি শব্দ হয়ে উঠছে!
সঞ্জয়: ঠিকই বলেছিস। আত্মীয়-অনাত্মীয়, পরিচিত- অপরিচিত নির্বিশেষে সকলের সঙ্গে প্রীতিপূর্ণ মার্জিত আচরণ প্রদর্শনই তো শিষ্টাচার ও সৌজন্য। অথচ মানুষ আজ ধীরে ধীরে তা হারিয়ে ফেলছে যেন।
সুব্রত: মানবজীবনে সৌজন্য ও শিষ্টাচার অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এই বোধ জীবন ও প্রগতির ধারক- বাহক। সৌজন্যবোধ ও শিষ্টাচারের মিলিত প্রয়াসেই সমাজে পরিপূর্ণ মানুষ গড়ে ওঠে।
সঞ্জয়: মানবতাবোধ ও হৃদয়ের অমলিন বিকাশে এবং প্রাণের স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশেও সৌজন্যবোধ তথা শিষ্টাচারের ভূমিকাকে অস্বীকার করা যাবে না। এই বোধই তো পারে মনুষ্যসমাজকে সকল সংকোচ, ভয়, হীনম্মন্যতা, নীচতা ও স্বার্থপরতা থেকে মুক্তি প্রদান করতে।
সুব্রত: ছাত্রদের ক্ষেত্রে তো সৌজন্য ও শিষ্টাচারের স্পর্শ লাভ অত্যন্ত আবশ্যক। তারা সদ্য প্রস্ফুটিত ফুলের মতো। সৌজন্য ও শিষ্টাচারই তাদের বিনীত ও ভদ্র মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়তা করবে।
সঞ্জয়: সে তো অবশ্যই। আমাদের সমাজের ভবিষ্যৎ চালকগণ যদি অসংযমী, অস্থিরমনা, উদ্ধত ও অবাধ্য হয় তাহলে তাদের কি কেউ কখনও ভালোবাসবে, মান্য করবে? জীবনে সম্মান অর্জনের জন্যও একজন সুনাগরিক হিসেবে তাদের গড়ে ওঠা একান্ত প্রয়োজন, তার জন্য সৌজন্যের শিক্ষালাভ অবশ্যম্ভাবী।
সুব্রত: বর্তমান সময়ের অবস্থার কথা ভাবো তো। কত শিক্ষিত মানুষ ও ছাত্রছাত্রী শিষ্টাচারের অভাবে মানসিক মন্দাগ্নিতে ভোগে, সমবয়সি বা বড়োদের প্রতি অশিষ্ট আচরণ প্রদর্শন করে।
সঞ্জয়: এতে যে শুধু তার সম্পর্কে মানুষের মনে খারাপ ধারণা গড়ে উঠছে তাই নয়, তার ভবিষ্যৎ জীবনের পথও হয়ে উঠছে জটিল। তাই পুথিগত বিদ্যার্জনের পাশাপাশি ঘরে-বাইরে সর্বত্র সংহত আচরণ প্রদর্শনের পন্থাটিও আয়ত্ত করা প্রয়োজন।
সুব্রত: অবক্ষয় ও বিশৃঙ্খলা রোধ করে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য তাহলে শিষ্টাচারের শিক্ষাগ্রহণ ও প্রদানই সর্বাগ্রে প্রয়োজন। আমাদেরও তাই এ বিষয়ে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।