রাষ্ট্রবিজ্ঞানে আইন’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে

রাষ্ট্রবিজ্ঞানে আইন' বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
রাষ্ট্রবিজ্ঞানে আইন’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

আইন

রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ‘আইন’ বলতে যা বোঝানো হয়েছে এবং যেভাবে আইনের সংজ্ঞাগুলি প্রদত্ত হয়েছে সেগুলিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যায়। যেমন-

ব্যাপক অর্থে আইন

রাষ্ট্রবিজ্ঞানে আইন শব্দটিকে ব্যাপক অর্থে প্রয়োগ করা হয়েছে। [1] সামাজিক মানুষের আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণকারী যেসব রীতিনীতি, প্রথা, ঐতিহ্য প্রভৃতি বিদ্যমান সেগুলিকে সামাজিক আইন বলা হয়। [2] আবার যে সমস্ত আইন দ্বারা প্রাকৃতিক জগতের বিভিন্ন ঘটনা ও তার কার্যকারণ সম্পর্কসমূহ ব্যাখ্যা করে তাহল প্রাকৃতিক আইন। তেমনি আবার [3] সমাজবদ্ধ মানুষের ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, উচিত- অনুচিত প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে যেসব নৈতিক নিয়মাবলি বিদ্যমান তাকে নৈতিক আইন বলা হয়। এইভাবে আইনের বিভিন্ন অর্থ প্রদান করা হয়েছে।

সংকীর্ণ অর্থে আইন

সংকীর্ণ অর্থে আইনের সংজ্ঞা অন্যরকম। যেমন- [1] মানুষের রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপ, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও মতাদর্শ প্রভৃতির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত রাষ্ট্রীয় নিয়মকানুনকে আইন বলা হয়। [2] আছন সার্বভৌম শক্তির দ্বারা সমর্থিত ও প্রযুক্ত হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে গৃহীত ‘আইন’-এর ধারণাটির সঙ্গে সার্বভৌম শক্তির সমর্থন জড়িত।

আইন সার্বভৌমের আদেশ

আবার আইনের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে হবক্স, বৌদা, হল্যান্ড, জন অস্টিন প্রমুখ আইনকে সার্বভৌমের আদেশ বলে মনে করেছেন। জন অস্টিন বলেছেন, “আইন হল সার্বভৌমের আদেশ” (Law is the command of the sovereign) | হল্যান্ডও অনুরূপভাবে বলেছেন যে, সার্বভৌম মানুষের বাহ্যিক আচার-আচরণের ওপর নিয়ন্ত্রণের জন্য রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের দ্বারা যেসব নিয়মকানুন প্রয়োগ করে তাকে বলা হয় আইন। অপরদিকে হেনরি মেইন, মেটল্যান্ড প্রমুখ চিন্তাবিদ আইনকে সার্বভৌম কর্তৃপক্ষের নির্দেশ, বলতে চাননি। তাঁরা মনে করেন যে, সকল দেশে দীর্ঘকাল ধরে যেসব প্রথা, রীতিনীতি, ঐতিহ্য, লোকাচার প্রভৃতি চলে আসছে সেগুলিই আইন হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। উইলসন আইনের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন যে. আইন বলতে মানুষের আচরণ ও চিন্তার সেইসব অংশকে বোঝায় যাকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে এবং যা সুস্পষ্ট ও সরকার দ্বারা সমর্থিত। আবার বাকার বলেছেন, আইন হল এমন একটি বিষয় যার মধ্যে বৈধতা ও নৈতিক মূলা অবশ্যই থাকতে হবে।

মার্কসীয় ধারণা

অপরদিকে মার্কসবাদীরা অন্যভাবে আইনের সংজ্ঞা দিয়েছেন। ডিশিল্কী (Vyshinsky) বলেছেন যে, আইন বলতে সেইসব আচরণবিধিকে বোঝায় যাতে সমাজের প্রতিপত্তিশালী শ্রেণির ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে। ল্যাঙ্কি অনুরূপভাবে উল্লেখ করেছেন যে, আইন বলতে বোঝায় সমাজে অধিকারভোগী শ্রেণির স্বার্থ বহনকারী কতকগুলি নিয়মকানুনের সমষ্টি। মার্কসবাদীদের মতে ‘আইন’ হল উপরিকাঠামোর একটি উপাদান বিশেষ। আইনের নিজস্ব কোনো ইতিহাস নেই। কারণ রাষ্ট্রীয় আইনের উৎপত্তি ঘটেছে রাষ্ট্রের উদ্ভব ও বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে। সমাজের ভিত্তি হল আর্থনীতিক উৎপাদন এবং এর সাথেই আইন সাযুজ্য। রেখে সংখ্যালঘু ধনিক-বণিক শ্রেণির স্বার্থ রক্ষা করে চলেছে।

উপসংহার: 

অতএব বলা যায় যে, আইন মানুষের বাহ্যিক আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণকারী কতকগুলি বিধির সমষ্টি, যার বিধানসমূহ সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট। সার্বভৌম শক্তি আইনকে কার্যকর করে।

Leave a Comment