ভারতের জনজীবনে হিমালয়ের গুরুত্ব
ভারতের জনজীবনে উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল বা হিমালয়ের গুরুত্ব আলোচনা করো |
ভারতের জনজীবনে হিমালয় পর্বতমালার গুরুত্ব অপরিসীম।
জলবায়ুর ওপর প্রভাব :
ভারতের উত্তরভাগ জুড়ে প্রাচীরের ন্যায় সুউচ্চ হিমালয় পর্বতমালার অবস্থান ভারতকে মধ্য এশিয়ার তীব্র শীতল বায়ুর হাত থেকে রক্ষা করে। এ ছাড়া দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ু হিমালয় পর্বতে বাধা পায় বলেই ভারতে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটে।
নদনদীর উৎস : বরফাবৃত পর্বতমালা নদনদীর উৎস হিসেবে কাজ করে এবং নদীতে সারাবছর জলের জোগান দেয়।
কৃষিকাজ: হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের বহু অংশে ধাপ কেটে ধান, ভুট্টা প্রভৃতি চাষ করা হয়। এ ছাড়া ফল, চা, মশলা, বিভিন্ন ভেষজ উদ্ভিদ এখানে চাষ করা হয়। যেমন- কাশ্মীর উপত্যকার জাফরান বিখ্যাত।
পশুপালন: হিমালয়ের বিভিন্ন উপত্যকায় গড়ে ওঠা তৃণভূমিগুলি পশুপালনের জন্য বিখ্যাত।
বনজ সম্পদ: হিমালয়ের চিরহরিৎ ও সরলবর্গীয় অরণ্যের কাঠ বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়।
খনিজ সম্পদ: হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে কয়লা, খনিজ তেল, তামা প্রভৃতি খনিজ সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। অদূর ভবিষ্যতে এগুলিই শিল্পের কাঁচামালের চাহিদা মেটাবে।
জলবিদ্যুৎ : হিমালয়ের নিত্যবহ নদীগুলি খরস্রোতা হওয়ায় জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের উপযোগী। উদাহরণ হিসেবে ভাকরা নাঙ্গাল জলবিদ্যুৎ প্রকল্প (শতদ্রু), নিম্ন ঝিলাম প্রকল্প (ঝিলাম) উল্লেখযোগ্য।
শিল্পসমৃদ্ধি: হিমালয় অঞ্চলে কারুশিল্প, মৃৎশিল্প, পশম শিল্প (পশমিনা শাল- কাশ্মীর), চা শিল্প প্রভৃতি বিশেষভাবে বিকাশ লাভ করেছে। তবে হিমালয়ের নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভারতের পর্যটন শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটিয়েছে – কাশ্মীর, কুলু, মানালি, দার্জিলিং, সিমলা, গ্যাংটক প্রভৃতি স্থানে দেশ-বিদেশ থেকে অসংখ্য পর্যটক ভিড় করে।
ভারতবর্ষকে বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশ বলা হয় কেন
ভারতবর্ষকে ‘বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশ’ বলা হয় কেন? |
ভারতবর্ষকে ‘বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশ’ বলা হয় নানা কারণে—
ভৌগোলিক বৈচিত্র্য
ভারতের উত্তর দিক বরাবর অবস্থান করছে ভঙ্গিল পর্বতমালা হিমালয়; দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম দিকে যথাক্রমে ভারত মহাসাগর, বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগর এবং মধ্যভাগে রয়েছে বিশাল সমভূমি ও মালভূমির সমাহার, পশ্চিম দিকে রয়েছে মরুভূমি। উপকূলভাগে উপকূলীয় বৈশিষ্ট্যও বর্তমান। এতরকম ভূপ্রাকৃতিক বৈচিত্র্য ভারতের ভূমিরূপকে আলাদা বৈশিষ্ট্য প্রদান করেছে।
জলবায়ুগত বৈচিত্র্য
ভারতের পূর্বে মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে সর্বাধিক বৃষ্টিপাত যেমন হয় তেমনই পশ্চিম দিকে বৃষ্টিহীন মরু জলবায়ু দেখা যায়। উত্তর দিকে পার্বত্য অঞ্চলে শীতল জলবায়ুর সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণ দিকে উপকূলবর্তী অঞ্চলে সমভাবাপন্ন জলবায়ু পরিলক্ষিত হয়। মধ্যভাগে তেমনই চরমভাবাপন্ন জলবায়ু বিরাজ করে। এই জলবায়ুর বৈচিত্র্য ভারতকে অন্য দেশ থেকে আলাদা করেছে।
মৃত্তিকাগত বৈচিত্র্য
ভারতের মধ্যভাগে পলিমাটি, দাক্ষিণাত্যে কালো মাটি, ছোটোনাগপুর মালভূমি অঞ্চলে ল্যাটেরাইট ও লালমাটি, উপকূলে লবণাক্ত মাটির প্রাধান্য দেখা যায়, যা ভারতের কৃষিকাজ ও স্বাভাবিক উদ্ভিদের ওপর প্রভাব ফেলেছে এবং ভারতকে বৈচিত্র্যপূর্ণ করে তুলেছে।
স্বাভাবিক উদ্ভিদগত বৈচিত্র্য
পার্বত্য অঞ্চলে সরলবর্গীয় উদ্ভিদ, মরু অঞ্চলে কাঁটাজাতীয় উদ্ভিদ, উপকূলে ম্যানগ্রোভ জাতীয় উদ্ভিদ, সমভূমিতে চিরহরিৎ ও পর্ণমোচী জাতীয় উদ্ভিদের প্রাধান্য দেখা যায়। এই বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদের সমন্বয় ভারতে বৈচিত্র্য এনেছে।
সংস্কৃতিগত বৈচিত্র্য
ভারতে নানা ভাষা, ধর্ম, বর্ণ, জাতির সংমিশ্রণ ঘটেছে, যা বিভিন্ন প্রকার সংস্কৃতিকে একত্রিত করে সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যকে সমৃদ্ধ করেছে।
পরিশেষে বলা যায়, ভারতের অবস্থান ও আয়তনগত বিশালতার জন্য সারা দেশ জুড়ে মানুষের ভাষা, ধর্ম, সংস্কৃতি ও পোশাকপরিচ্ছদে পার্থক্য লক্ষ করা গেলেও সব জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকলে মিলে এক ঐক্যের বন্ধন গড়ে তুলেছে। এই বহু ভাষা, সংস্কৃতি ও জাতিসত্ত্বাকে মর্যাদা দিয়ে সকলে মিলে এক ও অখণ্ড ভারতবর্ষকে বাঁচিয়ে রেখেছে। বহুর মধ্যে ঐক্যের এমন সহাবস্থান পৃথিবীর আর কোথাও নেই – সেই কারণে ভারতকে “বৈচিত্র্যের মধ্যে একতা” আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
কৃষি বনসৃজন কাকে বলে
কৃষি বনসৃজন
কৃষি বনসৃজন (Agroforestry) |
সংজ্ঞা
কৃষকেরা যখন নিজের জমিতে কৃষিফসল উৎপাদনের পাশাপাশি কাঠ, ফলমূল, ঔষধ, সবুজসার ইত্যাদি উৎপাদনের উদ্দেশ্যে গাছপালা লাগান, তখন তাকে কৃষি বনসৃজন বলে।
সুবিধা
- কৃষকদের অব্যবহৃত বা উৎপাদনশীল হয়ে ওঠে।
- মৃত্তিকাক্ষয় রোধ হয়।
- পতিত জমিও কৃষকের আয় বৃদ্ধি পায়।
- জমিতে জৈব সারের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
- গৃহস্থালির দৈনন্দিন জ্বালানির চাহিদা মেটে।
- ছদ্মবেকারত্ব কমে।
- ভেষজ গাছপালা চাষের মাধ্যমে ঔষধ শিল্পে কাঁচামালের জোগান বৃদ্ধি পায়।
- দূষণ প্রতিরোধ সম্ভব হয়।
- পশুখাদ্যের জোগান বাড়ে।
- প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষিত হয় ও বাস্তুতন্ত্র সুরক্ষিত হয়।
অসুবিধা
- সঠিক গাছ নির্বাচন না করা হলে সম্পূর্ণ জমি ছায়াবৃত হয়ে পড়ে। ফলে কৃষিকাজ ব্যাহত হয়।
- কৃষি বনসৃজনে গাছ বৃদ্ধিতে সময় লাগে। তাই কৃষকের তাৎক্ষণিক লাভের সুযোগ কম।
- ইউক্যালিপ্টাস জাতীয় গাছ মাটির আর্দ্রতা হ্রাস করে, মাটিকে ক্ষারধর্মী করে।
কৃষি বনসৃজনের উপযুক্ত জমি ও গাছ
কৃষকের চাষযোগ্য জমির আল, কোনো পতিত জমি বা বাড়ির আশেপাশের ফাঁকা জমি, বাগান প্রভৃতি কৃষি বনসৃজনে ব্যবহার করা যায়। কৃষি বনসৃজনের উপযুক্ত গাছগুলি হল নিম, সুপারি, নারিকেল, কলা, আম, কাঁঠাল, জাম, লেবু, কুল, কদম, সোনাঝুরি, বাসক, সিংকোনা, নয়নতারা, কালমেঘ প্রভৃতি।
আরও পড়ুন – শৈশবের স্মৃতি রচনা